মোঃ মাসুম বিল্লাহ
শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। হয়তো পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ পেশা। একই সাথে সব থেকে অবহেলিত পেশা। যদিও কথাটি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের মান মর্যাদার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান । প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জিম্মী প্রতিষ্ঠানের কাছে। এক কথায় কামলা; না এটা আমার কথা নয়, প্রতিষ্ঠান প্রধানের বক্তব্য। নিকৃষ্ট করে বললে হয়; গোলাম। সত্যিতো পৃথিবীর সব থেকে নিকৃষ্ট লেভার শিক্ষা ব্যবসায়ীর হাতে। শিক্ষা যাদের হাতে পণ্য তারা বেকারত্বের সুযোগকে কাজে লাগায়; সরকারকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায়। তবু সমাজ সেবক হিসাবে এদের বাহবা দেয় এক শ্রেণির জীব। সমাজের আস্থাকুঁড়ে যার ঠিকানা সে হয়তো বারবনিতা। এ নিকৃষ্ট সম্প্রদায় অন্যের পাপের বোঝা নিজের কাঁধে নেয়, আর যারা শিক্ষাকে করে পণ্য তারা নিজের পাপ অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। এদর ব্যবসা করা উচিৎ তবে শিক্ষার নয় বরং চামড়ার; দু’পায়ে চামড়ার। আর পায়ের চামড়া যখন মুখে উঠবে তখন তাদের পাপ মোচন হবে।
“শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয় মূল্যবোধ সৃষ্টি; জ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় মাত্র”- প্রমথ চৌধুরীর এ কথা আজ সভা সমিতি আর বক্তব্যের মঞ্চে সীমাবদ্ধ । শিক্ষা দানের জন্য যেখানে সেখানে ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা মনে হয় সমীচীন হবে না; গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান । আর শিক্ষা সে ব্যবসার খোলস মাত্র। খোলসের আড়ালে গিরগিটের মতো নিজেকে লুকিয়ে মুখে শিক্ষার বুলি লালসালুর মজিদদের। অসহায় জাতির অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে জোঁকের ন্যায় রক্ত পিপাসু হায়নাগুলো আঙ্গুলকে কলা গাছ করে তোলে। সম্মানের বেড়াজালে শিক্ষককে সীমাবদ্ধ করে যেখানে ব্যবসায়ী তার পুঁজিবাদী হাতকে লোলুপ করে তোলে। সেখানে শিক্ষা! শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধরমের আগাছা বেশি বুলির নামান্তর।
আজ যখন ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছিলাম, “একটা সময়ে এদেশের কৃষকের গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ আর গোলা ভরা ধান ছিল”। সে কথা আজ অতীত। তখনি মনে হচ্ছিল একটা সময় নাকি শিক্ষকতায় সম্মান ছিল। আজ তাও অতীত! শিক্ষক তার সম্মান হারিয়ে আজ ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী চিন্তা চেতনার সাথে বেকারত্বের যন্ত্রণা ঘুচাতে একদল অসহায় মানুষ বন্দী জীবন যাপন করছে। চারিদিকে গোল্ডেন জি.পিএ,-এর ছড়া ছড়ি। বাড়ছে পাসের হার বাড়ছে মানুষ আর তার সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শুধু বাড়ছেনা শিক্ষকের সম্মান। আজ সে মানুষ গড়ার কারিগর নয় বরং শিক্ষা ব্যবসার শ্রমিক। আর ছাত্র, ছাতার মতো গজিয়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রোডাক্ট। এ প্রোডাক্ট প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষক। এখন তারা গুরু শিষ্যে নয় বরং শ্রমিক আর কাঁচামাল। আর এ কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণের ফ্যাক্টরি যারা খুলে বসেছে তারা রাতারাতি ধনী হতে যথেচ্চারে ব্যস্ত। এখন ছাত্র ক্রেতা আর প্রতিষ্ঠান বিক্রেতা, এ ক্রয় বিক্রয়ে শিক্ষক নবমীর পাঠা। জীবনে খুব বেশি কিছুর দরকার নেই সুখী হওয়ার জন্য। অর্থের লিপ্সা মানুষকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে। ব্যক্তি জীবনে অনেক অপূর্ণতা রয়েছে। যা চেষ্টা করেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তা নিয়ে ভেবে কষ্ট বাড়ানোর কোন মানে হয় না। স্রষ্টা আমার জন্য যা ভালো তাই করাচ্ছে। তাই ভাবিও না কেন পেলাম না। হয়তো অনেকর মতো অর্থ বিত্ত প্রভাব পতি পত্তি নেই। কিন্তু নেই কোন বড় সমস্যাদি। ছোট খাটো জ্বর সর্দিকাশি নিয়েভালোই আছি। আল্লাহর অশেষ নিয়ামত টুকটাক অসুখ বিসুখ। নিজের পরিবার আর শিক্ষা বান্ধব পরিবেশে সহকর্মীদের স্নেহসুলভ আচরণ কাজকে ভালোবাসতে শেখায়।
কলেজের শিক্ষকতা করে প্রাচুর্য না পেলেও সম্মানটুকু আমাদের পুঁজি। কতনা ভালো লাগে যখন কোন স্টুডেন্ট ছুটে আসে কাছে, স্নেহর পরশ পাওয়ার আশায়। নিজেকে ধন্য মনে হয় যখন দেখি ছাত্রছাত্রীরা অপাত্য ভালাবাসার শ্রদ্ধা মিশিয়ে মনের মনি কোঠায় স্থান দেয়। জন্মদিন নিজের মনে না থাকলেও তারা ঠিকই মনে করিয়ে দেয়। এক বছর পার করতে তাদের হারানোর ভয় মনে বেদনার ভালোবাসা জাগায়। শিক্ষক যেন পীর মনে হয় স্টুডেন্টদের পরীক্ষা উদ্বিগ্নতা আর দুআ চাওয়ার প্রতিযোগিতায়। তোমাদের ভালোবাসায় সিক্ত আমার মতো একজন মানুষের আর কী চাই। হ্যা চাই তোমরা সুখী হও, জীবনে অনেক বড় হও, মহান মানুষের মতো মনুষ্যত্বপূর্ণ হও, বিবেকবান হও, সৎ হও সর্বোপরি ভালো মানুষ হলেই শিক্ষকের সফলতা। শিক্ষক তখনই স্বার্থক যখন তার ছাত্রছাত্রী তাকে অতিক্রম করে, কারণ তোমাদের সাফল্য আমাদের বিজয়। জয় হোক আমার ছাত্রছাত্রীদের। আর শিক্ষকের প্রশান্তি এখানেই।