মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ শরণখোলা প্রতিনিধি। সুন্দরবনের শরণেখোলা রেঞ্জের দুবলার জেলে পল্লীর বিভিন্ন চরে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শুঁটকি আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। এজন্য বন বিভাগ থেকে অনুমতি(পাস) গ্রহণ করে প্রায় দশ সহশ্রাধিক জেলে দুই হাজার ট্রলার ও নৌকা নিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা শুঁটকি পল্লীতে কার্যক্রম শুরু করেছে।
গত বছর এ মৌসুমে এ খাত থেকে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে বলে বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে এবং চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকলে সরকারী রাজস্ব আয়ের লক্ষ মাত্রা ৮ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারনা করেছে।জেলেদের নিরাপত্তায় বন বিভাগ, নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ডের নজরদারী থাকবে বলে জানা গেছে। বন বিভাগ থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী শুটকি পল্লীতে অবস্থানরত জেলেরা অস্থায়ী ঘর নির্মানে বনের কোনো গাছ ব্যবহার করতে পারবে না। অন্যদিকে এ বছর শুটকি জেলে পল্লীতে জেলেদের আইডি কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সুত্রে জানা যায়, পৃথিবীর অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবন থেকে যে রাজস্ব আসে তার বড় অংশ আসে এই শুঁটকি পল্লী থেকে। এ মৌসুমে দুবলা জেলে পল্লীর টহলফাড়িঁর আওতাধীন সাগরতীরবর্তী আলোর কোলে ৮২৫ টি জেলে ও শুঁটকি সংরক্ষণ ঘর, ৯০ টি দোকান ও ৫১ টি ডিপো ঘর, নারকেল বাড়িয়ার চরে ৯৫ টি জেলে ঘর, ২ টি দোকান ও ৪টি ডিপো, শ্যালার চরে ৭৫ টি জেলে ঘর, ২টি দোকান, ৪টি ডিপো ও মাঝের কিল্লয় ৪০ টি জেলে ঘর ৫টি ডিপো নির্মানের অনুমতি দিয়েছে বনবিভাগ।
বঙ্গোপসাগর থেকে আহরিত লইট্যা, ছুরি, চিংড়ি, লাখা, জাবা, পোয়া মাছ থেকে তৈরি শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাছাইকৃত শুটকি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এছাড়া জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট প্রাজাতির মাছ, কাঁকড়া ও জলজ প্রাণী শুকিয়ে তা দিয়ে ফিস ফিড তৈরি করা হয়। আহরিত মাছ বাছাই করে জাত অনুসারে শুটকি করে থাকে জেলেরা।
আইডি কার্ড বিষয়ে জানতে চাইলে এই বন কর্মকর্তা বলেন, আইডি কার্ড থাকলে জেলেদের চিহ্নিতকরণ করা সম্ভব। তবে চরে বসেই প্রত্যেক জেলের ছবি তোলার ব্যবস্থা করতে পারলে কাজ করতে সুবিধা হবে এবং কার্ডের মাধ্যমে অপরাধ প্রবনতা ও শিশু শ্রম কমবে বলে তারা মনে করেন।
শুটকি পল্লীতে অবস্থানরত জেলেরা জানায়, চরের বিশাল এ জনগোষ্ঠির সুপেয় পানির সংকট এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্দ্যোগ না থাকায় জেলেরা বিপাকে পড়েন।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল আহম্মেদ মুঠোফোনে বলেন, সুন্দরবনে ডাকাত ও জলদস্যু মুক্ত পরিবেশ থাকায় নির্বিগ্নে মাছ আহরণ ও শুটকি উৎপাদন করতে পারবে জেলেরা।
পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল কবির ও দুবলা ফরেষ্ট টহলফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ সহশ্রাধিক জেলে ২ হাজার ট্রলার ও নৌকা নিয়ে মৎস্য আহরণ ও শুটকির কাজে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সাগরে মাছ আহরণ ও শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন জেলেরা। শুটকি খাতে ২০২৩ সালে এ মৌসুমে ৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারী রাজস্ব আয়ের লক্ষ মাত্রা ৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলেদের নিরাপত্তা দিতে বন বিভাগ কোষ্টগার্ড নৌবাহিনী ও পুলিশ কঠোর নজরদারী করবে।