মোঃ মাসুম বিল্লাহ।।
বাংলাদেশ একটি আজব দেশ। এদেশের মানুষ বিচিত্র। কেননা এই দেশে মানুষকে খুশি করা খুব কঠিন। পৃথিবীর বুকে অসংখ্য দেশ রয়েছে, সে সকল দেশের মানুষকে সহজে খুশি করা যায় এবং তারা জাতীয়তা বোধের দিক থেকে একটা নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে সকলে এক। কিন্তু বড় আজব বাঙালি জাতি। তাদের অর্ধেক ভারতে আর অর্ধেক বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ৫০ টির মতো জাতি গোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও এদেশের মানুষের জাতিগত স্বীকৃতি তারা বাঙালি। এরকম বিভাজিত জাতি সত্ত্বা পৃথিবীর আর কোন দেশে বিরাজ করে না। যারা নিজের ভূখণ্ডের বাইরের লোককে
নিজের অংশজ্ঞান করে। আর এরকম জাতিগত অনৈক্যের ফলে বিভাজন চরম বিপাকে ফেলে।
২৪ আন্দোলন পরবর্তী সময়ে দেশের কান্ডারী হিসাবে ড. মুহাম্মাদ ইউনুস হাল ধরেন। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে আমাদের দেশে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর গ্রহণযোগ্যতা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তার মত একজন বিশ্ব মাপের লোক যে কিনা বিশ্ব কাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার জন্মস্থান কিনা এই দেশ। তবু তিনি অবহেলিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত। এই ব্যক্তিটি অসংখ্য কাজ করেছেন উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকে। তারপরেও এই ব্যক্তিটি আমার মনে হয় যে হতাশ হয়ে গিয়েছেন তার সমালোচনা দেখে।
পৃথিবীর বুকে আর কোথাও দেখা যায় না যে সরকারের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনার বাইরে ব্যক্তিগত আক্রোশ করতে। আমাদের দেশে গঠনমূলক সমালোচনা হয় না। আমাদের দেশে বেশি হয় ক্ষমতার লোভে দম্ভ। আমাদের দেশে বেশি হয় ক্ষমতাকে আকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা। এজন্য ভালো মানুষের কদর কখনো আমরা করিনি করতেও আমরা জানি না।
মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ খুব অল্প সময়ে মালয়েশিয়াকে একটা রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন। বয়সের ভারে দীর্ঘ দিনের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে অবসর নিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে একটু নিশ্চিন্তে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু সে দেশের জনগণ মাহাথির মোহাম্মদকে আবার টেনে এনে পুনরায় রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বোঝা গেল যে তারা গুণের কদর করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে গুণের কদর নাই। তাই শহীদুল্লাহর মতে বলতে হয় যে,” যে দেশে গুণের কদর করে না সে দেশে জ্ঞানী জন্মাতে পারে না।”
ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস খুব সাদামাটা গোছের একজন সাধারণ মানুষ। তিনি এসেছিলেন জনগণের ডাকে সাড়া দিয়ে। তার আসার ইচ্ছাও এত ছিল না। কিন্তু এসেছিলেন পরিস্থিতি বিবেচনা করে, মানুষের কথা ভেবে, সকলের কান্ডারী হয়ে এসে হাল ধরেছিলেন এবং সে সময়টাতে সকলে তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় কিছুদিন যেতে না যেতে এই মানুষগুলো তাদের সমহিমায় ফিরে আসে। এই মানুষগুলোই ক্ষমতার লোভে ৬ মাস পেরতে না পেরতেই গালিগালাজ করতে শুরু করলেন। আর আমি অবাক হতে থাকলাম এটা দেখে এবং এটা ভেবে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস প্রথম যখন এসেছিলেন তখন তার মুখে যে সুন্দর একটা জাদুকারি হাসি ছিল দিন দিন তা মলিন হচ্ছে। তিনি ভাবছেন আর অবাক হচ্ছেন কত অসভ্য জাতি এই বাংলাদেশের মানুষ; কিভাবে একজন আরেক জনকে দাবিয়ে রাখা যায় এই চিন্তায় তারা ব্যস্ত। তারা নিজের ভাগ্যের উন্নতি চায় কিন্তু অন্যের ভাগ্যের উন্নতি দেখলে হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।
ঈর্ষা পরায়ন হয়ে তারা নিজের বাইরে অন্য কার উন্নতিকে মেনে নিতে পারে না। শুধু ব্যক্তি উন্নতি ছাড়া সামষ্টিক উন্নতিকে তারা মেনে নেয় না। এই ছোট্ট একটা ভূখণ্ডের এই দেশে অগণিত মানুষ ১৮ থেকে ২০ কোটি মানুষের ভেতরে হয়তো ১৮ থেকে ২০ লাখের মতাদর্শন রয়েছে। আর এই মতাদর্শকে কেন্দ্র করে একজন আরেক জনের সাথে বিরোধিতা করে থাকে। এই বিরোধিতা শুধু যদি রাজনৈতিক পরিমন্ডলে আদর্শগত হতো তাহলে সেটা ঠিক ছিল। কিন্তু এটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের তারা নিয়ে যেয়ে থাকেন যা এদেশের মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস তেমনি বলির পাঠা হিসেবে উপনীত হয়েছেন । কেননা এই দেশের মানুষ তাকে খুব বেশি দিন সহ্য করতে পারছে না। এদেশের মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে আত্ম অহংকার। যার ফলে এরা একজন আরেক জনকে সহ্য করতে পারে না। এই দেশ যে দিন সভ্য হবে সেদিন হয়তো ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের কদর বুঝবে। এর আগে ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এর মত লোককে আমরা বুঝতে পারবো না। তাকে নিয়ে আমরা অহংকার করতে পারবো না।
পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নাই, যারা তাদের জাতীয় স্বার্থে এক হয় না। কিন্তু আমাদের এই দেশে জাতীয়তা বোধ তৈরি হয়নি। যার জন্য জাতীয় স্বার্থে সকলে এক হতে পারছে না। কেননা এই দেশটাকে তারা তাদের বাপ দাদার তালুক মনে করে। আবার কেউ মনে করে এই দেশের জন্মের ইতিহাসটা ভুল ছিল। সুতরাং দেশটাকে যে বিনির্মাণ করে খুব বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমার মনে হয় এই দেশের মানুষের মধ্যে এখনো বোধদয় জন্ম হয়নি। এখনি সে বোধের জন্ম হওয়া উচিত তা না হলে ইউনুসের মতো লোককে আমরা হাতছাড়া করলে আবার
সেই হানাহানি, রক্তারক্তি ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে ফিরে যেতে বেশি সময় লাগবে না। তাই আসুন সকলে আমরা ইউনূসের কদর বুঝি, আমরা দেশটাকে রক্ষা করি। দেশটাকে সমৃদ্ধির পথে নেওয়ার জন্য দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যক্তি স্বার্থকে পরিহার করি।
ডঃ ইউনুস এই স্বল্প সময়ে যে কাজগুলো করেছেন তার কিছু নজির উপস্থাপন করি।
তার উদ্যোগে যা যা হচ্ছে-
১. সকল সরকারি সকল কাজ অনলাইনে করার উদ্যোগ নওেয়া হচ্ছে। ফলে বাড়ি বসে কাজ করার ফলে ঘুষের রাজত্ব হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে।
২. প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। যার স্বীকৃতি স্বরূপ এদেশে ইতিহাসের সরকারের পক্ষে প্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৩. রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেছে । অর্থাৎ পণ্যের
দাম কমেছে ২৫ রজমানের বিদ্যুতের সমস্যা কেউ পায়নি।
৪. তার অনুরোধে পৃথিবীর সকল দেশের সরকার বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে শিল্প উন্নত দেশগুলো।
৫. আরব আমিরাতের ভিসা কয়েক বছর ধরে বন্ধ। দ্রুত খোলার জন্য একমত হয়েছে আমিরাতের সরকার।এমনকি সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
৬. আসিয়ান সদস্য হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও দেশের অর্থনীতিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৭. আমাদের দেশ থেকে সহজে শ্রমিক যাবে মালয়েশিয়া ,যেখানে সকল সমস্যার অবসান ঘটানো হচ্ছে কোন জটিলতা ছাড়াই যেতে পারবেন।
৮. চীন দিবে প্রযুক্তি সহায়তা,মেডিক্যাল সহায়তা ও সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা ও চিকিৎসা সেবা সহায়তা ফলে ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
৯. নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনার আলোচনা চলছে। এতে করে দেশ ভারতের দাসত্ব থেকে বের হতে পারবে।
১০. আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়বে। বাহিরের পণ্য বাংলাদেশে আসবে। এতে করে কৃষকরা লাভবান হবে। দেশের কৃষকরা নতুন স্বপ্ন দেখবে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
১১. দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য চালু হচ্ছে অনলাইনে সকল ধরনের সরকারি সেবা।
১২. জমি সংক্রান্ত সকল কাজ অনলাইনে হবে। যেখানে বড় অংকের ঘুষ আর হয়রানি পোহাতে হবেনা হয়তো। টোটাল ভূমি সেবা অনলাইন করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
১৩. জাতীয় রাজস্ব বিভাগ ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বড় বড় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ হয়তো আর পাবেনা।
১৪. জিডি করার জন্য আর থানায় যেতে হবে না। ঘরে বসেই থানায় জিডি করা যাবে। সেই কার্যক্রম দ্রুত সময়ের ভিতরেই অনলাইনে চালু হচ্ছে।
১৫. নারীদের অভিযোগ কেন্দ্রের সবকয়টা কল সেন্টারে নারী নিয়োগ করা হচ্ছে। এখন সবাই মন খুলে সকল অভিযোগ বলতে পারবে।
১৬. নারীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করতে সর্বোচ্চ সংস্কার হয়তো এদেশে হবে।
১৭. প্রবাসী বাংলাদেশীদের হয়রানি বন্ধ করা হচ্ছে। বিমানের টিকেট সম্পূর্ণ অনলাইন করা হয়েছে যার কারণে ৭৫% টিকেটের দাম কমেছে। মানে দালাল সিন্ডিকেট মুক্ত টিকেট বাজার।প্র বাসীরা সহজেই দেশে আসা যাওয়া করতে পারবে। বিমান বন্দরে তাদের জন্য ভিআিইপি মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।
১৮. হাজীদের জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। যেখানে থাকবে লাগেজ না হারানোর ভয়। ডাক্তারি সেবা পাবেন। যেখানে যাবেন সেখানের ইতিহাস বাংলায় পড়তে পারবেন। থাকছে নিরাপদে ভ্রমণের সুবিধা। হাজীদের হজ্জ যাত্রা সহজ করতে রিয়েল টাইম- এপ্স এ থাকছে যেখানে যেই প্রয়োজনীয় দুয়া সেটা মনে করায় দিবে, প্রয়োজনীয় রুট নির্দেশনা, শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের সাথে অনলাইন পরামর্শ, প্রতিটি পবিত্র স্থানের ছবি সংবলিত ইতিহাস
বর্ননা করা, কল সেন্টার সাপোর্ট।
১৯. স্টারলিংকের কথা যদি বলি, কোন সরকার চাইলে আর তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।
২০. দেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। পাসপোর্ট এখন ঘরে বসে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে পৌঁছে যাবে আপনার ঘরে।
২১. গুজব নিয়ন্ত্রণে হেল্প করবে জাতিসংঘ, অর্থাৎ বাংলাদেশের কেউ হেল্প না করলেও বিদেশি শক্তি সহায়তা করবে।
২২. গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত সরকারের মূল উদ্দেশ্যে। দুর্নীতিবাজদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনছে।
২৩. জুলাই চার্টার হচ্ছে। কে কোন সংস্কার চাচ্ছে কিংবা কে কি কি সংস্কার চাচ্ছেনা সবই জনগণ দেখতে পারবে। কারণ সরকার সবকিছু ওয়েবসাইডে দিয়ে দিবে অর্থাৎ কোন দলটা দেশপ্রেমিক জনগণ দ্রুতই জানতে পারবেন।
২৪. ডিএনএ টেস্টের ল্যাব নির্মাণে কাজ চলছে তার মানে অপরাধীকে দ্রুত সনাক্ত করার সহজ উপায় থাকছে। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ডিএনএ ল্যাব তৈরি করা হচ্ছে।
২৫. মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। রেমিট্যান্স সর্বোচ্চ আসছে। দূতাবাসগুলো যেন দ্রুত কাজ করে সেই বিষয়েও কাজ করছে।
২৭. সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং জানুয়ারী মাসেই ৭% বেড়েছে।
২৮. রপ্তানি বেড়েছে ১৩%
২৯. আগামী মাসে ৪ দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করবে, যেখানে ইতিমধ্যেই বিশ্ব বিখ্যাত ডিপি ওয়ার্ল্ড, সিংগাপুর পিএসএ, এপি মোলান মার্ক্স কয়েক বিলিয়ন ডলার প্রস্তাব দিয়েছে।
৩০. গত জানুয়ারি মাসে সুইজারল্যান্ডের ডাবলস এ ৪৭ টি আলাদা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে বিভিন্ন সরকার প্রধান, ইনভেস্টরদের সাথে মিটিং এ তারা বাংলাদেশ এ বিনিয়োগ নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
৩১. সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা ইস্যু শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।
৩২. আরব আমিরাতকে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলায় তারা আগ্রহ দেখিয়েছে এবং ২ টি কাজ দিয়ে তারা শুরু করবে।
ক. মুসলিম বিশ্বের জন্য হালাল গোসত প্রসেস কারখানা । খ. মৎস্য প্রসেস কারখানা চালু করবে এবং নতুন সমুদ্র বন্দর পরিচালনার জন্যেও আগ্রহ দেখিয়েছে।
৩৩. আসিয়ান সদস্য হওয়ার জন্য ড. ইউনুস আগ্রহ দেখিয়েছেন, আসিয়ান বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়া। তাদের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম ড. ইউনুসের আবেদনে সারা দিয়েছেন। তিনি ড. ইউনুসকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
৩৪. চায়না সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট, বিজনেস ডেলিকেটস সহ বিশ্বের সর্ববৃহৎ সোলার নির্মাতা লংজি বাংলাদেশে কারখানা করবে। এছাড়া প্রযুক্তিগত সহায়তা, চিকিৎসা সেবা বিষয়ে আলোচনা হবে। তারা আমাদের দেশ থেকে দ্রুত মৌসুমি ফল নিতে আগ্রহী।
৩৫. সাউথ এশিয়ান অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং আমাদের বিস্তৃত সমুদ্র অঞ্চল নিয়ে একটা দারুণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব। নেপাল ও ভুটান আমাদেরকে জলবিদ্যুৎ দিতে আগ্রহী এতে জীবাশ্ম জ্বালানীর উপর নির্ভরতা কমবে। যা ইন্টারন্যাশনালি রেকগ্নাইজ হবে।
৩৬. দুর্নীতি রোধে হাইয়েস্ট জিরো টলারেন্স, সরকারি অফিসে ই-ফাইলিং এবং যত জায়গায় সম্ভব অনলাইন সেবা চালু করা হবে। এমনকি ই সেবা দেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেয়ার জন্য সরকারকে ইমেইল করার জন্য আহব্বান করা হয়েছে, যে কেউ এটার স্টেক হোল্ডার হিসেবেও কাজ করতে পারবে।
৩৭. মধ্যপ্রাচ্যের এয়ার টিকিটের দাম ৭৫% কমে গেছে।
৩৮. বাংলাদেশের সবথেকে বড় সমস্যা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা প্রস্তাব পাস হয়েছে ১৪০ দেশের প্রত্যক্ষ ভোটে।যেখানে কোন দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়নি। রোহিঙ্গাদের আগে যেখানে খাবার বাবদ মাসিক সাত ডলার তথা ৮৪৭টাকা দেওয়া হতো। নতুন বাজেটে সেটি বাড়িয়ে এখন থেকে জনপ্রতি খাবারে ১২ ডলার তথা ১৪৫২ টাকা দেওয়া হবে।
৩৯. তারুণ্যের উৎসব সারাবছরব্যাপী করা হবে, এতে শহর ও গ্রামে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড হবে এবং সেরাদের রেকগ্নাইজ করা হবে স্ব স্ব ক্ষেত্রে।
ড.ইউনূস যখন পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু চীন সফরে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশ্বমানের মেডিকেল প্রতিষ্ঠা,১২হাজার কোটি টাকার চারটি মহাসাগরীয় বাণিজ্য হাজার ক্রয়, ১০ হাজার কোটি টাকার তিস্তা ব্যারেজ তৈরি,বিনা শুল্কে ২০২৮ সাল পর্যন্ত মুক্ত পণ্য বাণিজ্য সহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ১ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, ফেডারেল থেকে খরব এলো, দীর্ঘ একযুগ পর বাংলাদেশের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু এমাসে দেশে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলার তথা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ফলে রিজাভ ১৩ বিলিয়ন থেকে দাড়লো ২৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যে ১টি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে; পাশাপাশি পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতার আলেকে সমঝোতা স্মারকগুলো আসছে। বিশেষ করে চীনের অনেক দিনের আগ্রহ আছে মংলা সমুদ্র বন্দর নিয়ে। সেটা এই সফরে সমঝোতা স্মারক হয়েছে।
চুক্তি স্বাক্ষর : বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়।
সমঝোতা স্মারক: সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা, বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ, একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
তাছাড়া চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে যে সম্মান দেখালো তা দেখে তার সফর সঙ্গীসহ পুরো বাংলাদেশে অবাক হয়েছে। তার সফর সঙ্গী যে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করছে এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন রাষ্ট্রতো হিন্দু, মুসলিম, পাহাড়ি, সমতল সকলের নাগরিক অধিকার বজায় রাখতে আহ্বান করেছেন এবং সবাইকে শবে কদরের রাতে দেশের জন্য দুয়া করতে বলেছেন ও ঈদের শুভেচ্ছা জনিয়েছেন। ঈদে বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে বলেছেন। গরীব রিলেটিভসদের সাথে সন্তানের পরিচয় করিয়ে দেওয়া ও খোঁজখবরের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য চিন্তাভাবনার আহ্বান রেখেছেন। ঈদের জামাতে সকলেই যেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি সেই জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে দুয়া করতে বলেছেন।
ইউনূস স্যার আমাদের কল্পনার থেকেও মেধাবী। এমন মেধাবী ,দেশপ্রেমিক জনবান্ধব মানুষই আমরা চেয়েছিলাম। দলমতের ভেদাভেদ ভুলে দেশপ্রেমিক মানুষগুলো সহায়তা করলে হয়তো দেশ বিশ্বের উন্নত দেশে পরিনত হতে বেশি সময় লাগবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জাপান তার জাতীয়তা বোধে এতো শক্ত হয়েছিল যে বিশ্বের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আর আমরা জাতি হিসেবে সভ্য হতে না পারলে সতিকার অর্থে কোনো বিপ্লব স্বার্থক হয় না। আজ রাশিয়া বলেন, ইউরোপ, জাপান, চীন বলেন আর সিঙ্গাপুর, মালেশিয়া বলেন তারা বিপ্লবের পর,স্বাধীনতার পর তাদের গুছিয়ে নিয়েছে, নিজেদের পরিবর্তন করে নিয়েছে বলেই তারা আজ উন্নয়নের শিখরে। অন্যদের জন্য আইডল। আর আমাদের অবস্থা দেখেন এতো বড় একটা বিপ্লব হওয়ার পরেও আমরা নিজের সুধরাতে পারছি না, একজন খেয়ে গেছে অন্য জন্য সেই হাড্ডিও ছাড়তে নারাজ। জাতি হিসেবে আমরা বৃটিশদের রেখে যাওয়া সেই মধ্যেই আছি। জাতি হিসেবে পরিবর্তন, সভ্যতার নতুন পন্থা গ্রহণ করার মধ্যেই রয়েছে সাফল্যের চাবিকাঠি।
সুতারং তাকে প্রয়োজন বাংলাদেশে যতো দিন জাতিগত ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত না হবে, যতো দিন বিশ্ব দরবার তার কাছে নতজানু থাকবে,যতো দিন প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার রাজনীতি বন্ধ না হবে, যতো দিন তার মত সুন্দর করে অহিংস ও মানবতার কথা বলার মতো রাজনীতিবিদ তৈরি না হবে, যতো দিন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে জনগণের দোহায় দিয়ে নিজের অপরাধ অস্বীকারের পথ বন্ধ না হবে, যতো দিন রাজনীতিবিদের মধ্যে সেচ্ছায় নিজের অপারগতা স্বীকার করে পদত্যাগ করার মাসসিকতা তৈরি না হবে, যতো দিন মন্ত্রী এমপি বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বন্ধ হবে ইত্যাদি; ঠিক ততোদিন ।