সারা দেশের শহর থেকে গ্রাম—প্রাণের উৎসবে ভাসছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন আবহে, যেখানে উৎসবের প্রাণচাঞ্চল্য ছুঁয়ে যাচ্ছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি প্রান্তে বর্ণিল আয়োজন, শোভাযাত্রা, সঙ্গীতানুষ্ঠান আর লোকজ মেলায় প্রাণ পেয়েছে বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক এ উৎসব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ এ বছরের অন্যতম আকর্ষণ। ২৮টি জাতিগোষ্ঠীর ৪৯৪ জন শিল্পী বর্ণিল সাজে অংশ নিয়েছেন এ শোভাযাত্রায়, যা এবার আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপ পেয়েছে। শোভাযাত্রা থেকে উচ্চারিত হয়েছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের বার্তা।
শোভাযাত্রায় বিশাল আকারের মোটিফগুলোতে ফুটে উঠেছে সামাজিক প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের প্রতীক—যেমন ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, কাঠের বাঘ, ইলিশ, পালকি, ‘৩৬ জুলাই’, এবং পানি বোতল। এছাড়াও ছিল সুলতানি-মোগল আমলের মুখোশ, বাঘের মাথা, রঙিন চরকি, মাছের ডোলা, পাখা, ঘোড়া, লাঙলসহ লোকজ উপকরণ।
শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো দলবদ্ধভাবে পরিবেশিত হয়েছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত গান “From the River to the Sea, Palestine Will Be Free”।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ছিল ড্রোন শো এবং মনোমুগ্ধকর কনসার্ট, যা ঢাকায় অবস্থিত চীনা দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজন করে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
উৎসব উপলক্ষে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে রমনার বটমূলে। ভোরবেলা বৈরভীতে রাগালাপের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এ আয়োজনে গাওয়া হয়েছে মুক্তির গান, দেশপ্রেমের গান, এবং মানবিকতার জয়গান।
রবীন্দ্র সরোবরে চ্যানেল আই ও সুরের ধারার আয়োজনে হাজারো কণ্ঠে গাওয়া হয়েছে বর্ষবরণের গান, সঙ্গে ছিল লোকজ মেলা ও ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনা।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বিস্তৃত কর্মসূচি ছাড়াও প্রতিটি জেলা-উপজেলায় হয়েছে স্থানীয় উৎসব। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈশাখী র্যালি ও অনুষ্ঠান হয়েছে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে। বাংলা একাডেমি ও বিসিকের উদ্যোগে হয়েছে সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলা। কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় পরিবেশিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার।
প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশ মিশনগুলোতেও হয়েছে বৈশাখ উদযাপনের বিশেষ আয়োজন। এভাবে ঘরোয়া আয়োজনে থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও এবার অনুরণিত হয়েছে বাংলা নববর্ষের আনন্দধ্বনি।