1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
মুক্তিযুদ্ধ যেন কাল হল আওয়ামী লীগের - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৬:৪৫ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধ যেন কাল হল আওয়ামী লীগের

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
  • ৪৫ জন খবরটি পড়েছেন

মোঃ মাসুম বিল্লাহ ।

মুক্তিযুদ্ধ যেন কাল হল আওয়ামী লীগের। ১৯৭১ সাল পূর্ব ও পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ। ১৯৭১, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাস পরিবর্তন করে দিয়েছে। সে ইতিহাস পরিবর্তনকারী ঘটনার পিছনে যারা কাজ করেছে বা কল কেটে নেড়েচে তারা ৪৭ এর দেশ বিভাগ পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের একছত্র সম্রাট হয়ে উঠতে শুরু করে। সেই আওয়ামী লীগ কালের বিবর্তনে আজ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলো।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দলটির যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ৫বছর যেতে না যেতে এ সংগঠন মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে নিজেদের আদর্শ পরবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৫৫ সালে মুসলীম শব্দটি বাদ দিয়ে ‘আওয়ামী লীগ’ নাম ধারণ করে। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর নির্বাচন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব এবং ১৬ই ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয় সবগুলো প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ অবিসংবাদিত ছিল। কিন্তু ৭১ পরবর্তী সময়ে তাদের কার্যক্রম গুলো বিতর্কিত হতে শুরু হয়।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে রচিত হয় একটি নতুন অধ্যায়। এদিন সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস করে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন (বাকশাল) কায়েম করেন। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করেন। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসাবে তিনি এ পদক্ষেপকে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘোষণা করেন। বাকশাল কায়েম এবং একছত্র ক্ষমতার অধিকার হওয়ার জন্য সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান তার ব্যক্তিগত ইচ্ছার বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করলে তখনই এদেশের মানুষ বিপ্লবে ফেটে পড়ে যার ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণকারী জনতা বা এদেশের বীররা তা মেনে নিতে পারেনি। যার ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আরো একটি বিপ্লবের জন্ম দেয়। সেই বিপ্লবের নির্মম সত্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান কারী নেতাকে  স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যবশত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বিদেশে থাকার জন্য  বেঁচে যান। যদিও এর পিছনে শেখ মুজিবের ক্ষমতা লিপ্সা, রক্ষীবাহিনীর একচ্ছত্র কর্তৃত্বকে অনেকে দায়ী করেন। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ৬ বছর বিদেশে থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এদেশে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। যদিও ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েমের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক মৃত্যু হয়। হাসিনার দেশে আসার মধ্য দিয়ে বাকশাল থেকে বেরিয়ে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করে আওয়ামী লীগ। তিনি দেশে এসে আওয়ামী লীগের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাদের দলটাকে গঠনমূলক করার কার্যক্রমে হাত দেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ আর একবার রাজীতিতে নিজেদের নেতৃত্ব দৃঢ় করেন। যার ফলাফল ১৯৯৬ সালে তারা সরকার গঠন করেন। ১৯৯৬ এক মেয়াদে কাজ করে পরবর্তীতে তারা ২০০৮ সালের, ২৯ ডিসেম্বর নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেন। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছারি হয়ে উঠতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ব্যবসা সেটা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে তারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের একছত্র অধিপতি মনে করতে শুরু করে এবং মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র অংশিদার দাবী করে তারা ক্রেডিট নিতে চায়। এর ফলে আমজনতা বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাদের কাছে এটি ভাওতাবাজি মনে হয়। যদিও তারা বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এদেশের একটা  বড় অর্জন মনে করে। কিন্তু কোন দল যখন ব্যক্তিগত স্বার্থের এ চেতনার একক মালিকানা দাবী করে ও নিজের সুবিধা বা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এ চেতনা ব্যবহার করতে শুরু করে তখনি বড় ধাক্কাখায় দলটির ইমেজ।

মুক্তিযুদ্ধকে কোন দল বা ব্যক্তির সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতিতে নারাজ এই তরুণ প্রজন্ম। কারন তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি কিন্তু তারা দেখেছে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, নির্যাতন, গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যাকান্ড। এগুলো দেখে দেখে তারা আওয়ামী লীগের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে অবদান সেই অবদানকে পুঁজি করে যখন অন্যকে হত্যা করার, গুম করার, আয়নাঘরে বন্দী করার শাসন জারি করে ঠিক তখনই এ দেশের তরুণ সমাজ ফুঁসে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩০ জুন, ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ আইন পাসের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নতুন বিতর্ক জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে প্রশাসনিক ও নির্বাহী ক্ষমতা রেখে নির্বাচনের পায়তারা করলে এদেশের রাজনৈতিক দল তা প্রত্যাখান করে। তবু ভোটার বিহীন এই প্রহসনমূলক নির্বাচন করে তামাশার জন্ম দেয়। এর বিরোধিতার ফলে নির্বাচনের দিন ১৯ জন ও তার আগের দিন পর্যন্ত ১২৩ জন, পরে আরো অসংখ্য লোকের মৃত্যু হয়। ফলে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। ফলে এই দলটার প্রতি ১৯৭৫ এর পরে আর একবার মানুষের আস্থার সংকটে ফেলে দেয়। পুনরায় ২০১৮ সালে প্রশাসনের সহযোগিতায় জনমতকে উপেক্ষা করে রাতের ভোটের মাধ্যমে আগে থেকে ব্যালট বক্স ভরে রেখে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করে দিনের বেলা লোক দেখানো প্রহাসন করেন। ভোটার বিহীন এ নির্বাচনে জনমত উপেক্ষা করার আর একটা দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ। ভোটার দের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা দ্বারা ভোট বাক্স ভরা জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। ২০২৪ সালে বিএনপিসহ ভিন্ন মতালম্বী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলে নিজেদের দলের লোককে বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ফলে জনগন ও তরুণ প্রজন্মের মনে এক বিদ্বেষের জন্ম হয়। অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় ২০০৮ এর পরে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ প্রতিটি নির্বচনে জনগনকে উপেক্ষা করার বিষটি এদেশের তরুণ প্রজন্ম হজম করতে পারেনি। তাছাড়া ভারতের প্রতি অন্ধ ভক্তি ও নিজেদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতি করার আদর্শ এদেশের জনগন মেনে নিতে পারেনি।

দীর্ঘ দেড় দশক শাসন ও বিরোধী মত দমনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠে নব্য ফ্যাসীবাদের রোল মডেল। বিশেষ করে এ প্রজন্মের ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এর নির্বাচনের নামে প্রহসন ও প্রতিটি নির্বাচনে ভারতের ধাপ্পাবাজি সমর্থন দেখে আওয়ামী লীগের প্রাতি ঘৃণার জন্ম হয়। তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তবু তাকে অস্তিত্বে ধারণ করেছে। কিন্তু তারা আওয়ামী লীগের দুঃশাসন দেখে বড় হয়েছে। ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ করে রাজাকারের শাস্তি নিশ্চিত করাকে যে প্রজন্ম স্বাগত জানিয়েছিল সেই প্রজন্ম ২০১৪ সালের নির্বাচন দেখে হতাশ হয়। জামায়াত নেতাদের ফাঁসীর রায় নিয়ে এদেশে ম্যাস কিলিং শুরু হয়। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী রায়কে কেন্দ্র করে শিশু ও নারীসহ ১৬০ জনের অধিক নিরীহ প্রাণ ঝরে হাসিনার প্রশাসনের হাতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জামায়ত ইসলামকে নির্মুল করার যে নীল নকশা প্রনয়ণ করে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় মামলা, জেল, জুলুম ,গুম, খুন হয়ে পড়ে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা যা তরুণ প্রজন্মকে মর্মাহত করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বলে এসব হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়া লাইসেন্স দেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে দেশ বিরোধী, আগুন সন্ত্রাসী, উন্নয়ন ধ্বংসকারী হিসাবে পরিচয় করানো ব্যাপারটি ছিল বেশ হাস্যকর। নিজেরা আগুণ সন্ত্রাস করে বিএনপি ও জামায়াতের উপর দায় দিয়ে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করার কৌশলে জনগণ চরমভাবে হতাশ হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বলে জনগনের কাছ থেকে জামায়াতকে হত্যা করার ম্যান্ডেটে পেতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রির নাটক সকলের কাছে উপাস্থাপিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জামায়াত ইসলামের নিবন্ধন বাতিল ও শীর্ষ নেতাদের ফাঁসী দিয়ে নিজেরা যে বিতর্ক  জন্ম দেয় তার আগুনে ঘি ঢালে ২০১৩ সালের শাপলা হত্যাকান্ড। ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিয়ার হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ছাড়া লোক দেখানো বিচার নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ বিরাজ করছিল তার আগুন দ্বিগুণ বেগে বয়তে শুরু হয় হেফাজত ইসলামের সমাবেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের হত্যাকান্ড ও কথা বলার স্বাধীনতাকে দমন করতে দেখে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টার ফলে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে দেশদ্রোহী হিসাবে পরিচয় করে জাতিকে হতাশ করে। তাছাড়া গণতন্ত্রের মানস কন্যা বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। খালেদা জিয়ার ছোট সন্তান কোকোর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, আর এক সন্তানের নির্বাসন, বালির ট্রাক নাটক, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শাস্তি প্রদান করে জেলে প্রেরণ ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ বঞ্চিত করে এক নির্মমতা জন্ম দেয়। আর এসব কিছুর পিছনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গল্প সকল বৈধতার লাইসেন্স। বিরোধী মত দমন, বাক স্বাধীনতাকে হরণ,গুম, খুন, হত্যার বৈধতার লাইসেন্স মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যবসা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দাবী মানুষের মনে বড় ধাক্কা দেয়।

২০২৪ সালে কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে সংগঠিত অহিংস ছাত্রদের আন্দোলনকে ট্যাগ দেওয়া শুরু করলে ছাত্রজনতা ফুঁসে ওঠে। ১ জুলাই শুরু হওয়া সাধারণ এ আন্দোলন সরকারী হটকারিতা, ক্ষমতার দম্ভ ও দমন পীড়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবহার, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার ঘৃণ রাজনীতি আপমার ছাত্র জনতা মেনেনিতে পারেনি। ফলে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে সমস্ত স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর সরকার তা দমন করতে গুলি করে ছাত্র জনতার বুকে। ১৬ জুলাই, ২০২৪ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করলে তার দাবানল ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশে। অতপর মীর মুগ্ধ সকলকে মুগ্ধ করে পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আরো বেগবান হয় এ আন্দোলন। ছাত্রদের দৃঢ় মনোবল, তেজদিপ্ত সিদ্ধান্ত দমনে ছাত্র হত্যার মিশনে নামে সরকার; পুলিশ তার মুল সৈনিক। ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনকে দমন করতে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ও হল খালি করার হুকুম দেয়। ফলে আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু ছাত্র আন্দোলনের মুল চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হন নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে। ছাত্রদের বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল আর নতুন নতুন কর্মসূচিতে ধরাশয়ী হয়ে পড়ে সরকার। এর মধ্যে সমন্বয়কদের গ্রেফতার করে ডিবি অফিসে রাখা হয়। আর তখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারথির বেশে রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন নতুন গতি পায়। ছাত্র জনতা ঢাকা ত্যাগ না করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। অন্য দিকে প্রতিটি শহরে নগরে বন্দরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মঞ্চ গড়ে ওঠে। গুলির ভয়ে ভীত না হয়ে প্রতিদিন আরো ‍বিপুল সংখ্যক জনস্রোত শামিল হয় আন্দোলনে। শিশু, বৃদ্ধ ,বাল ,বনিতা থেকে শুরু করে সকলে রাস্তায় নেমে আছে। আর সরকার আরো কঠোরভাবে দমন পীড়ন শুরু করে। ফলে ঘরে শুয়ে থাকা শিশু, ছাদে খেলারত শিশু ও আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু করে সকল কিছু স্তব্ধ করে দিতে চায়। ফলে ছাত্র জনতা ডাক দেয় সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের। সরকার পতনের একদফা দাবীতে সমগ্র বাংলাদেশ ও জনগণ তার প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। অবশেষে প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতার মৃত্যু, ৫০ হাজার আহত, পঙ্গু বীরদের আত্মেত্যাগের কাছে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতা নতুন ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ৩৬ দিনের আন্দোলন বাংলাদেশের দ্বিতীয় অভ্যুদ্বয়। বাংলাদেশের সব থেকে পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী এ দলটি নিমেষে ধ্বংস হয়ে যায়।  সকল অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয় এদশের ছাত্র সমাজ।  

মূলত আওয়ামী লীগের এই পতনের পিছনে নিজের দলের হটকারিতা, নেতা কর্মীদের তেলবাজী ও লোভী মনোভাব, শেখ হাসিনার অহংকার, ভারতের প্রতি পরনির্ভরশীলতা যেমন দায়ী তেমনি ছাত্রলীগের দুঃশাসন; শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের বিশ্বজিৎ হত্যা, ভারত বিরোধিতার জন্য বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে মারা, এমসি কলেজে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, অসংখ্য খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে। আর এত সবকিছুর বৈধতার লাইসেন্স ছিল তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। কিন্তু নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে কারো একক মালিকানা দিতে নারাজ। তাছাড়া তারা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে গড়তে বিশ্বাসী। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই মানুষগুলো মুক্তিযুদ্ধকে কোন দলের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করতে চাননি। তাই তারা রাস্তায় নেমে এসেছে এবং ভুলে গেছে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে যাকে পুঁজি করে সকল অন্যায়কে ন্যায় বানানোর বৈধতা দেওয়া যায়। তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের একক ক্রেডিট বাজি দলকে নিশ্চিহ্ন করতে বাধ্য হয়েছে। তবু পরাজিত শক্তি জুলাই যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার আস্ফলন ও তর্জন-গর্জন নতুন বাংলাদেশের যোদ্ধাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। বিদেশে বসে সে দলের প্রধান নানা রকম বিশৃঙ্খলতার উসকানি দিয়ে চলেছে অবিরত। এখনো অনুতপ্তবোধের জন্ম হয়নি বরং নিজের প্রতি ছাপায় গাওয়ার গান সচল রাখার পাশাপাশি মুক্তযিুদ্ধের চেতনার ব্যবসা করে চলেছে। এমনকি ১০ মাস পেরতে না পেরতেই বহু স্থানে জুলাই যোদ্ধা ও আহত-নিহত পরিবারকে নির্যাতন ও হুমকীর সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে জুলাই যোদ্ধাদের জীবনে অতীত ক্ষত পুনরুজ্জীবত হয়ে ফিরে এসেছে। যার ফলে হাসনাত আব্দুল্লাহর মতো বলিষ্ট দেশপ্রেমিক আবার রাস্তায় নেমে এসছে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনের স্বপক্ষের শক্তি একাত্মতা প্রকাশ করে। জনতার দাবীর কাছে পরাজিত হয়ে সরকার ১০ মে, ২০২৪ সালের দিবাগত রাতে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যদিও এর মধ্যে দুরভিসন্ধি লুকিয়ে আছে তবু নতুন বাংলাদেশের মাথায় আর একটা পালক যুক্ত হলো। যে মুক্তিযুদ্ধের গান শুনিয়ে এতো দিন আওয়ামী লীগ সকলকে ঘুমিয়ে রেখেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধ যেন কাল হল আওয়ামী লীগের।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews