স্টাফ রিপোর্টার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বক্তৃতা দিতে গিয়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্মরণ করলেন তাঁর শিক্ষকতা জীবনের সূচনা, জোবরা গ্রামের নারীদের থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা এবং একটি নতুন অর্থনীতির দর্শনের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লেটারস (ডিলিট) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
আজ বুধবার বিকেল তিনটা ছয় মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে স্থাপিত মঞ্চে বক্তৃতা শুরু করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমার সমস্ত ভাবনার বীজ বপন হয়েছে এই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোনো দিন নোবেল পুরস্কার পাওয়া যাবে, এটা মনে আসেনি। তবে এর বড় অংশীদার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।’
অধ্যাপক ইউনূস ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন। তাঁর ভাষ্যে, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয় এবং পাশের গ্রাম জোবরায় কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘জোবরায় তখন কেউ মারা যায়নি, কিন্তু অবস্থা কাহিল ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় তো জ্ঞানের ভাণ্ডার, অথচ এই জ্ঞান পাশের গ্রামে পৌঁছায় না কেন—এই প্রশ্ন থেকেই আমার কাজ শুরু,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জোবরার নারীদের থেকে তিনি এমন এক অর্থনীতির ধারণা পেয়েছেন, যা প্রচলিত পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে মেলে না। ‘তাঁদের অনেকে নিজেদের নামও জানতেন না, কিন্তু সামান্য ঋণ পেয়ে নিজেদের জীবন পাল্টে দিয়েছেন। আমি এখান থেকেই বুঝেছি, ব্যবসাকেন্দ্রিক সভ্যতা আত্মঘাতী। আমাদের নতুন করে সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে।’
অর্থনীতিতে মানবিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, ঋণ মানবিক অধিকার। অনেকে উপহাস করেছিল। পরে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর কথাও বলেছি। বিরোধিতা হয়েছে, তবু আমি থামিনি।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইউনূস বলেন, ‘পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের নিজেদের হাতে। স্বপ্ন থাকতে হবে, আমরা কেমন সমাজ চাই, কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই—তা বের করে আনতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য ইয়াহ্ইয়া আখতার তাঁর হাতে ডিলিট ডিগ্রির সনদ তুলে দেন। ইউনূসের বক্তব্যে উঠে আসে তাঁর জীবনের নানা বাঁক, যা শুরু হয়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই।