1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
অব্যবস্থাপনার ছায়ায় রক্ষণাবেক্ষণ, বাড়ছে ঝুঁকি ও ক্ষয় - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

অব্যবস্থাপনার ছায়ায় রক্ষণাবেক্ষণ, বাড়ছে ঝুঁকি ও ক্ষয়

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
  • ৩৫ জন খবরটি পড়েছেন

রক্ষণাবেক্ষণ—শব্দটি যতটা সাধারণ, এর গুরুত্ব ততটাই ব্যাপক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রক্ষণাবেক্ষণের ভূমিকা অপরিসীম, হোক তা সড়ক-মহাসড়ক, ভবন, যন্ত্রপাতি, অথবা পরিবেশ। অথচ আমাদের দেশে ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ শব্দটি যেন একটি উপেক্ষিত ধারায় পরিণত হয়েছে। নতুন কিছু তৈরি হওয়াকে আমরা যতটা গুরুত্ব দিই, সেই নির্মাণের তত্ত্বাবধান ও স্থায়িত্ব ধরে রাখাকে প্রায়ই ভুলে যাই।

রক্ষণ মানে রক্ষা করা আর বীক্ষণ মানে নজরদারি। এই দুটি মিলে রক্ষণাবেক্ষণ—অর্থাৎ নজর রেখে সংরক্ষণ। ইংরেজিতে একে বলা হয় Maintenance, Custody কিংবা Supervision। এর মূল লক্ষ্য হলো কোনো জিনিস বা কাঠামোকে কার্যকর ও নিরাপদ রাখার জন্য নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা।

রক্ষণাবেক্ষণের প্রকারভেদ

বিশেষজ্ঞরা রক্ষণাবেক্ষণকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করেন:

  • প্রতিরোধমূলক রক্ষণাবেক্ষণ (Preventive Maintenance): পূর্ব প্রস্তুতি ও নির্ধারিত সময় অনুযায়ী যন্ত্র বা কাঠামোর তত্ত্বাবধান। যেমন: গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল চেঞ্জ।
  • সংশোধনী রক্ষণাবেক্ষণ (Corrective Maintenance): যখন যন্ত্রপাতি বা কাঠামোয় কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন তা ঠিক করা।
  • ভাঙ্গন রক্ষণাবেক্ষণ (Breakdown Maintenance): সম্পূর্ণভাবে বিকল হওয়ার পর মেরামতের প্রক্রিয়া।
  • বন্ধ রক্ষণাবেক্ষণ (Shut-down Maintenance): পূর্ব-নির্ধারিত সময়ের জন্য কাজ বন্ধ রেখে মেরামত।

আমাদের বাস্তবতা

বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ষণাবেক্ষণ হয় প্রতিক্রিয়াশীল (Reactive)। অর্থাৎ, যখন দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই যেন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। বহু সেতু বা সরকারি ভবন সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ধ্বসে পড়ে, প্রাণহানি ঘটে কিংবা কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অথচ নিয়মিত তত্ত্বাবধানে এগুলোর আয়ু বাড়ানো যেত।

প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার অভাব

রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার এখনো সীমিত। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কাগজ-কলমনির্ভর পরিকল্পনায় চলে, ফলে পূর্বাভাস নির্ভর তদারকি হয় না। বিদেশে যেখানে “Condition Monitoring” বা “Sensor-based Maintenance” চালু রয়েছে, আমাদের এখানে এখনো মানুষনির্ভর নজরদারিই ভরসা।

শিক্ষা ও সচেতনতার ঘাটতি

অনেক প্রতিষ্ঠানেই রক্ষণাবেক্ষণকে ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ’ হিসেবে দেখা হয়, যা একটি বড় ভুল। এটি আসলে ভবিষ্যতের ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার জন্য বিনিয়োগ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কিংবা সরকারি ট্রেনিংয়ে রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব আলাদাভাবে আলোচনা করা হয় না—এটিও সচেতনতার অভাবের বড় কারণ।

সমাধান কী?

  • ‌নির্ধারিত বাজেট রাখতে হবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।
  • ‌প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
  • ‌স্মার্ট সেন্সর, সফটওয়্যার, ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিমাপ পদ্ধতির প্রসার ঘটাতে হবে।
  • ‌এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি।

রক্ষণাবেক্ষণ শুধুই যন্ত্র বা স্থাপনার সীমায় আটকে নয়। এটি একটি চিন্তাধারা—যা ভবিষ্যতের ক্ষয় রোধ করে উন্নয়নকে টেকসই করে তোলে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews