বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের পূর্বঘোষিত সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। ৭ দফা দাবিগুলো হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চেয়ারম্যানের অপসারণ, এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ, মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিতকরণ, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সব হয়রানিমূলক বদলি আদেশ বাতিল। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা বাস্তবায়ন, অন্তর্বর্তী বোর্ড গঠন করে পবিসের কার্যক্রম চালানো।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ ও দাবি নিয়ে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারীরা বিশেষ করে বিদ্যুতের বিল সংক্রান্ত ব্যাপক বৈষম্যের অভিযোগ এনেছেন। তাদের অভিযোগ, গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এক মাসে বিল ১০০০ টাকা এলেও পরের মাসেই তা হঠাৎ করে ১০০০০ টাকা হয়ে যেতে পারে। এছাড়া, তারা বলছেন, মাত্র ৪০০ টাকার নিম্নমানের মিটার হাজার হাজার টাকায় গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের মূল অভিযোগ হলো, এই অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জনগণের হাতে হেনস্তা বা মারধরের শিকার হচ্ছেন। অথচ, তাদের দাবি অনুযায়ী, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কাজ করেন। যারা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ বা প্রতিকার চাইতে যান, তাদের উপর নেমে আসে চাকরিচ্যুতি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং সকল প্রকার হয়রানি।
এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা বিদ্যুৎ উপদেষ্টা এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সরকার নিজেই সমস্যা সমাধানের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোকে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু বিগত সাত মাসেও সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ARBI-এর প্ররোচনা, অবৈধ অর্থের উৎস এবং চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন যে, ১৪ কোটি সাধারণ মানুষের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন না, প্রয়োজনে জীবন দেবেন। তারা সারা দেশের সহকর্মীদের এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা উল্লেখ করেছেন যে, তাদের অনেক সহকর্মী এই সিস্টেমের সংস্কার এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইতোমধ্যেই জেল খেটেছেন। তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য শুধু চাকরি ফেরত পাওয়া নয়, বরং সিস্টেমের সামগ্রিক সংস্কার। তারা ১৪ কোটি মানুষের স্বার্থে ইতিহাসের সাক্ষী হতে চান। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাদের এই কর্মসূচি চলমান থাকবে এবং এতে অংশগ্রহণের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে। তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকেও তাদের কাছে এসে কথা শোনার এবং ভুল হলে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা সমিতির আয়ের টাকা ব্যাংকে জমা রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা সুদ বা কমিশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন। এই টাকা সমিতির উন্নয়ন বা গ্রাহককে কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যেত। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আগের ‘নো লস নো প্রফিট’ নীতি থেকে সরে আসা হলো। তারা মনে করেন, সরকার যদি টাকাটা নিজের বলে মনে করে তবে নিয়ে যেতে পারত, কিন্তু পল্লী বোর্ডের অ্যাকাউন্টে রেখে কমিশন বাণিজ্য করা উচিত নয়।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব হিসেবে পল্লী বিদ্যুৎ আইন সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান রয়েছে, যা বর্তমান ARBI চেয়ারম্যানের নেই। ARBI চেয়ারম্যানের একক জেদের কারণে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে বৈষম্যমূলক এবং বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সহকর্মীরা বর্তমানে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে অন্যতম হলো, ২০১৪ সালের ২৩শে অক্টোবর গঠিত সংস্কার কমিটি ২০২৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা অবিলম্বে জনসম্মুখে প্রকাশ করা। এছাড়া, অনিয়মিত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা, ARBI চেয়ারম্যানকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে সেনানিবাসের ব্যারাকে ফেরত পাঠানো, এবং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে, সংযুক্ত বা বরখাস্ত করা হয়েছে, তাদের সকলকে পুনরায় স্বপদে বহাল করা।