ডেস্ক নিউজ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালিত হচ্ছে। তাঁর সাহিত্য, সংগীত ও জীবনদর্শন এখনো সমাজকে আলোকিত করে, যখন বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতার ছায়া ঘনিয়ে আসে বিশ্বজুড়ে।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে, পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই বিদ্রোহী কবি একাধারে কবি, সুরকার, সাংবাদিক, নাট্যকার ও দার্শনিক হিসেবে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। শৈশবেই পিতৃহারা নজরুল বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন—মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেন, লেটো গানের দলে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন।
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা ঘটে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’, যা অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে এক সাহসী উচ্চারণ হিসেবে বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টি করে। এই কবিতা নজরুলকে কেবল সাহিত্যে নয়, রাজনীতি ও সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গনেও এক অনন্য কণ্ঠস্বর করে তোলে।
নজরুল প্রায় চার হাজার গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন, যার মধ্যে প্রেম, প্রতিবাদ, ধর্মীয় ভাবধারা, আধ্যাত্মিকতা ও সাম্যবাদের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। তাঁর উপন্যাস ‘মৃত্যুক্ষুধা’ ও ‘কুহেলিকা’, এবং প্রবন্ধগ্রন্থ ‘যুগবাণী’, ‘দুর্দিনের যাত্রী’ ও ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’—সমাজের বৈষম্য, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিল তীব্র প্রতিবাদ।
সাহসী উচ্চারণের কারণে তাঁকে জেলও খাটতে হয়। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য তাঁকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাহিত্যের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনায়ও যুক্ত ছিলেন তিনি। ‘ধ্রুব’ চলচ্চিত্রে নিজেই পরিচালনা ও অভিনয় করেন।
১৯৭২ সালে তাঁকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। এরপর তিনি এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। কবির ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।
নজরুল আজও এক জীবন্ত আদর্শ—যিনি সাহিত্য দিয়ে শোষণ, বৈষম্য ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়েছেন এবং নতুন প্রজন্মকে সমাজ বদলের প্রেরণা দিয়ে চলেছেন।