বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর মৃত্যু নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়ে গেছে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মধ্যে—কে দায়ী এবং কেন এখনো বিচার হয়নি?
গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছার আগেই মারা যান সাঈদ। বেলা ৩টা ৫ মিনিটে হাসপাতালের মৃত্যুর সনদে লেখা হয়, Brought Dead—অর্থাৎ আগেই প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
সহপাঠী ও আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিকেল ২টা ১৮ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। তাঁকে প্রথমে রিকশা ও পরে অটোরিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যান ছাত্রফ্রন্টের নেতাসহ সহপাঠীরা। হাসপাতালে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলেও, কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর খবর গোপন রাখে এবং মরদেহ হস্তান্তরে বিলম্ব ঘটায়।
মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীরা সাঈদের মরদেহ নিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ লাশটি ছিনিয়ে নেয়। লাশ উদ্ধারে নানা জটিলতা ও প্রশাসনিক গোপনীয়তা তৈরি হয়। পরে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে লাশ হিমঘরে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
রাত ১২টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে সাঈদের মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। তবে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে মোট ১৮টি সরকারি গাড়ি মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে রাখে। পথে থেমে থাকা, পরিস্থিতি “উত্তেজনাপূর্ণ” হওয়ার আশঙ্কার কথা বলে প্রশাসন তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর রাতেই দাফন করতে পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়। ইউএনও, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের তরফ থেকে এ চাপ আসে বলে অভিযোগ পরিবারের। এমনকি মাইকিং করে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হলেও তা নিয়ে হট্টগোল হয় এবং প্রশাসনের লোকজন লাশ দাফন করতে তৎপর হন। বাধার মুখে জানাজা শেষে তারা স্থান ত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সংগঠকেরা। তবে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেন, মামলাটি তাঁর ইউনিটের আওতাধীন নয়, এটি তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও পিবিআই।
আজ, ১৬ জুলাই ২০২৫, আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বিশ্ববিদ্যালয় ও এলাকা জুড়ে নীরব শোক ও বিচার চাওয়ার দাবি যেন আরও একবার উচ্চারিত হলো।