রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে যুদ্ধবিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর কন্ট্রোল রুমে জানিয়েছিলেন, “বিমান ভাসছে না…মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।” তার প্রথম সলো ফ্লাইটেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে, যা বৈমানিক প্রশিক্ষণের একটি জটিল ধাপ।
গত সোমবার (২১ জুলাই, ২০২৫) দুপুর সোয়া ১টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলা পুরাতন বিমানঘাঁটি থেকে এফ-৭ যুদ্ধবিমান নিয়ে একক উড্ডয়ন (সলো ফ্লাইট) শুরু করেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। এটি ছিল তার বৈমানিক প্রশিক্ষণের শেষ ও সবচেয়ে জটিল ধাপ, যেখানে পাইলটকে কোনো সহকারী, নেভিগেটর বা প্রশিক্ষক ছাড়াই একা বিমান পরিচালনা করতে হয়।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি উত্তরা, দিয়াবাড়ি, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রামপুরার আকাশসীমায় প্রবেশ করে। হঠাৎই বিমানটির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সেসময় পাইলট কন্ট্রোল রুমে জানান, “বিমান ভাসছে না…মনে হচ্ছে নিচে পড়ছে।”
তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোল রুম থেকে তাকে ‘ইজেক্ট’ (বিমান থেকে বের হয়ে যাওয়া) করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং সর্বোচ্চ গতিতে এটিকে ঘাঁটিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাত্র এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে।
বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত যেকোনো প্রশিক্ষণ ফ্লাইট জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে অনুষ্ঠিত হলেও, সলো ফ্লাইট অনেক সময় নগরাঞ্চলেই হয়ে থাকে। এ ধরনের ফ্লাইটের জন্য একজন বৈমানিককে যথেষ্ট দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়। নিহত বিমানচালক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর তেমনই একজন পাইলট ছিলেন বলে জানা গেছে।