দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের হরিণগাছি গ্রামের রহমত মন্ডলের ছেলে রনি আহমেদ (৩০) কে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে চাঁদার টাকা না পেয়ে চোর অপবাদ দিয়ে সারারাত শারীরিকভাবে নির্যাতন ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে পার্শ্ববর্তী হাসানপুর গ্রামের মিন্টু সহ তাদের লোকজনের বিরুদ্ধে ।
মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) আনুমানিক রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হরিণগাছি বাজার থেকে রনি আহমেদ ক্যারাম বোর্ড খেলে বাড়ি ফেরার সময় হাসানপুর গ্রামের মিন্টু সহ তার লোকজন রনি আহমেদকে ডেকে মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। এবং সারারাত হাসানপুর গ্রামের একটি বাড়িতে রনিকে আটকে রেখে চাঁদার দাবিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে এবং লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে পিটিয়ে আহত করে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রনি আহমেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছুদিন আগে পাশের গ্রাম হাসানপুরের মিন্টুর সাথে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয় এবং মিন্টু বলে এই ইউনিয়নে রাজনীতি ও ব্যবসা করতে হলে আমাকে চাঁদা দিয়েই করতে হবে! তা না হলে এই এলাকায় কেউ রাজনীতি করতে পারবেনা। এরই জের ধরে গতকাল রাতে মিন্টু সহ তার লোকজন রনিকে রাস্তা থেকে মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় এবং ১৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে পরে সেই টাকা রনি দিতে না চাইলে তারা রনিকে ধারালো অস্ত্র এবং লোহার রড ও হকিস্টিক দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। পরে রনি তাদের কথা অনুযায়ী ১০ লক্ষ টাকা দিতে চাইলে তারা রনিকে ছেড়ে দেবার আগে চোর অপবাদ দিয়ে কিছু ভিডিও স্বীকারোক্তি ধারণ করে নেয় বলে রনি জানান।
রনি আহমেদ বর্তমান কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।
এদিকে ভুক্তভোগী রনি আহমেদের গ্রামের সাধারণ লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় রনি বরাবরই ডানপিটে স্বভাবের একটি ছেলে, তার বিরুদ্ধ চুরির অভিযোগ ইতিপূর্বে কেউ শুনেনি। তাকে উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে সারারাত যেভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে তা দেখে আমরা রীতিমতো আতকে উঠেছি। মানুষ কিভাবে মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে তা আমাদের মাথায় আসেনা। তারা আরও জানান, এমন নির্মম নির্যাতনের সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হোক।
অন্যদিকে চুরির অভিযোগ তোলা হাসানপুর গ্রামের মিন্টুর সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত রাত তিনটার দিকে মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ঠিক সেই সময় আমার বাড়ির গেটে ধাক্কা দেয় হরিণগাছি গ্রামের রনি। আমরা ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করলে পাশের একটি বাড়িতে দৌড়ে পালিয়ে যায় রনি। পরে সেখানকার লোকজন রনির উপস্থিতি টের পেলে সেখান থেকেও দৌড়ে একটি পুকুরে লাফ দেয়। এরপরে স্থানীয় জনগণ তাকে ধরে কিছুক্ষণ মারধর করার পরে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশকে অবহিত করলে দৌলতপুর থানা পুলিশ এসে রনিকে নিয়ে যায়।
মিন্টু আরো জানান, ইতিপূর্বেও আমার বাড়ি থেকে মোবাইল সহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি হয়েছে। এমনকি আমার এলাকায় অনেক বাড়িতেই এই ধরনের চুরির ঘটনা ঘটছে। এখন জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এত রাতে হরিণগাছি থেকে রনি হাসানপুর গ্রামে কেন এসেছে? মিন্টু আরো জানান, এ ঘটনায় আমি নিজে বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ জানান, ৯৯৯ ফোন পেয়ে রাতেই পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছেন, এখনো তদন্ত চলছে বাড়িওয়ালা ভুক্তভোগী মিন্টুর অভিযোগ পেয়েছি। যদি আর কেউ অভিযোগ করে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।