হুমায়ুন কবির, বাঘারপাড়া (যশোর) ।। যশোর ও মাগুরার দুটি উপজেলার মধ্যে চিত্রা নদীতে নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ১৫ টি গ্রামের মানুষ। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ভেলায় নদী পারাপার হচ্ছেন অনেকে। এতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থী, নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা।
যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার উত্তর প্রান্তের খানপুর গ্রামের সাথে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার হরিশপুরের মাঝে চিত্রা নদীর উপর বাঁশের সেতু। এ দুই উপজেলাকে বিভক্ত করেছে চিত্রা নদী। নদীর দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম ছিল একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ৪০০ মিটার দীর্ঘ ও ৪ ফুট চওড়া এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ১৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় ক্ষেত্রপালা,পাঠানপাইকপাড়া, খানপুর, হরিশপুর, পাঁচকাওনিয়া, আড়ুয়াকান্দির গ্রামবাসী নদী পারাপারে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, বাঘারপাড়া ও শালিখা দুটি উপজেলার মধ্যে চিত্রা নদীতে একটি ব্রিজের অভাবে হাজারো মানুষের বিড়ম্বনা দীর্ঘদিনের। এটি না হওয়ায় উভয় পাড়ের ১৫টি গ্রামের মানুষকে প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়তে হয়। দীর্ঘ দিন ধরে একটি বাঁশের সাঁকোই ছিল ভরসা। শালিখা উপজেলার দক্ষিণ সীমানা চিত্রা নদীর উত্তর পাড়ের হরিশপুর গ্রামের সাথে দক্ষিণ পাড়ে খানপুর শিববাড়ির ঘাট। এই নদীর পশ্চিম দিকে বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা, গাইদঘাট, সীমাখালী ও খাজুরা হয়ে কালীগঞ্জ চলে গেছে। অন্য দিকে পূর্বে নারকেলবাড়িয়ার মধ্য দিয়ে মাগুরার শালিখা উপজেলার পুলুম হয়ে কাজলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ডান দিকের শাখাটি বাঘারপাড়া উপজেলার বিল জলেশ্বরের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে দুই পাড়ের জনপদ বছরের পর বছর ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে।খানপুর বাজার ঘাটে নিজেদের উদ্যোগে দুই পাড়ের জনগণ প্রতিবছর বাঁশের সাঁকো তৈরী করে নিজেদের পারাপারের কাজ চালিয়ে নিচ্ছিল । কিন্তু বাঁশের সাঁকোটি বর্ষায় পানির তোড়ে ভেঙে ভেসে গেছে । সেখানে একটি ব্রিজের দাবি বহু বছরের। অথচ,স্বাধীনতার ৫৪ বছর অতিক্রান্তের পরও সেখানে সেতু নির্মাণ হয়নি।
ঘাটের পাড়েই খানপুর বাজার, একটু দুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে কয়েক‘শ শিক্ষার্থী প্রতিদিন স্কুল মাদ্রাসায় যাওয়া আসা করে থাকে। এখানকার বাসিন্দাদের এমন দুভোর্গ লাঘবে স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্যে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের কাছে বার বার আবেদন করেছেন। প্রতিবছর দু’পাড়ের মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেদের প্রয়োজনে বাঁশের সাঁকো সংস্কার করে থাকেন। চাঁদা তুলে বাঁশখুটি কেনে খানপুর বাজার কমিটি।
খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার মন্ডল জানান, নদীর বিপরীত পাশের কয়েক গ্রাম থেকে তার স্কুল ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো ছাত্র ছাত্রী আসে। বাঁশের সাঁকোটি পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ার ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে আসতে পারছেনা। একই অবস্থা প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদরাসায়।
বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস জানান, সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও সোমবার হাট বসে। নদীর উত্তর পাড়ের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন এ হাটে। এছাড়া কয়েকশ শিক্ষার্থী পারাপার হয় এ সাঁকো দিয়ে।
খানপুর দাখিল মাদরাসার সভাপতি এ এইচ এম আজিজুল ইসলাম বলেন,সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দুই পাড়ের মানুষের জমি চাষ আবাদ করতে হয় দুই প্রান্তের মাঠে। এসমস্যা সমাধানের জন্যে তিনি সরকারের কাছে সেতু নিমার্ণের দাবি জানান।
যশোর জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, দেখতে হবে নদীর দুই পাড়ে কোন রাস্তার আইডি আছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিতে বলছি। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।