নিজস্ব প্রতিনিধি।
সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণে গিয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হরিপদ মন্ডল (৬০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। সুন্দরবনের মালঞ্চ নদীর জোড়া বয়ারসিং এলাকায় শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় শনিবার সন্ধ্যায়।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, বন বিভাগ এই মৃত্যুর খবর রাখে না। এই ঘটনায় সুন্দরবনে জেলেদের নিরাপত্তা এবং বন বিভাগের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বনজীবীরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুধু কাগজ আর টাকার বিনিময়ে পারমিট পাই। কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সুন্দরবনে অসুস্থ হলে কোন জেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। সরকার ঠিকই বনজীবীদের কাছ থেকে রাজস্ব নিচ্ছে, কিন্তু তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
মৃত হরিপদ মন্ডল শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগরের সিংহড়তলী গ্রামের মৃত অনন্ত মন্ডলের ছেলে। তিনি দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
জানা যায়, গত সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকালে বনবিভাগের কদমতলা স্টেশন থেকে পাস নিয়ে হরিপদ মন্ডল ও সুকুমার মন্ডল ছোট নৌকায় কাঁকড়া ধরার জন্য মালঞ্চ নদীর জোড়া বয়ারসিং এলাকার একটি খালে প্রবেশ করেন। শুক্রবার দুপুরের দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হরিপদ মণ্ডল মৃত্যুবরণ করেন। পরে অন্য জেলেদের সহযোগিতায় তার লাশ গাবুরায় নেওয়া হয়। এরপর পরিবারের খোঁজ নিয়ে শুক্রবার রাত ১টার দিকে নীলডুমুর ঘাটে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে তার পরিবার ওই রাতেই নদীপথে লাশ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে পরিবার।
তার সঙ্গী সুকুমার মন্ডলের ভাষ্য মতে, কাঁকড়া ধরার এক পর্যায়ে হঠাৎ হরিপদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আশপাশের জেলেদের ডাকলে তারা নৌকা নিয়ে এগিয়ে আসেন। ততক্ষণে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
হরিপদ মন্ডলের প্রতিবেশী অবিনাশ চক্রবর্তী বলেন, সরকার আমাদের মতো গরিব জেলেদের কথা ভাবে না। বনে গেলে বাঘের ভয়, জলদস্যুর ভয়। এর ওপর যদি সরকারি অফিসগুলো এমন উদাসীন থাকে, তাহলে আমাদের কী হবে?
বন বিভাগের কদমতলা স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, আমরা পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনে যাই। বন বিভাগের উচিত আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তারা শুধু টাকা আর পারমিটের কথা বলে, আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই তাদের কাছে।
এ ঘটনায় পরিবেশকর্মী হাফিজুর রহমান হাফিজ ও আনিসুর রহমান বলেন, বন বিভাগের এই ধরনের উদাসীনতা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রেও একটি বড় বাধা। যদি বন বিভাগ প্রকৃত অর্থেই বনের অভ্যন্তরে কী ঘটছে তার খবর না রাখে, তাহলে অবৈধ কার্যকলাপ এবং চোরা শিকার রোধ করা কঠিন হবে। একইসঙ্গে, জেলেরাও নিজেদের জীবন রক্ষায় আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও বেশি নজরদারি এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা।