বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক।
পিআর নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনো রাজনৈতিক দল যত শতাংশ ভোট পায়, সংসদে তাদের আসনও প্রায় সে অনুযায়ী বণ্টিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি দল যদি ৩০% ভোট পায়, তবে তারা সংসদে মোট আসনের প্রায় ৩০% আসন পাবে।
এখানে মূল বিষয় হলো দলীয় ভোটের ভিত্তিতে আসন বণ্টন, কেবল প্রার্থী ব্যক্তির জনপ্রিয়তা নয়। ফলে ছোট দলগুলিও তাদের ভোট অনুযায়ী সংসদে জায়গা পায়।
১. ভোটাররা সাধারণত একটি দলকে ভোট দেন।
২. প্রতিটি দলের মোট প্রাপ্ত ভোট গণনা করা হয়।
৩. আইনসভায় নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন ভোটের শতকরা হিসেবে বণ্টন হয়।
৪. প্রতিটি দল তাদের প্রার্থীর তালিকা অনুযায়ী সংসদ সদস্য মনোনীত করে।
১. ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব – জনগণের ভোট সংসদে প্রায় সমানুপাতিকভাবে প্রতিফলিত হয়।
২. ছোট দলের সুযোগ – ছোট বা নতুন দল ভোটের অংশ অনুযায়ী সংসদে প্রবেশ করতে পারে।
৩. অপচয় কমে – কোনো ভোটই পুরোপুরি হারিয়ে যায় না, সব ভোট হিসাবের মধ্যে আসে।
৪. বহুদলীয় রাজনীতি জোরদার হয় – রাজনৈতিক বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
৫. সমঝোতার রাজনীতি গড়ে ওঠে – বড় দলগুলো এককভাবে আধিপত্য করতে পারে না, জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা থাকে।
১. জটিলতা – সাধারণ জনগণের জন্য হিসাবের পদ্ধতি বোঝা কঠিন।
২. জোট সরকারের ঝুঁকি – একক দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
৩. দলীয় প্রভাব বেশি – দলীয় তালিকা থেকে প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় জনগণের প্রত্যক্ষ পছন্দ কম প্রতিফলিত হয়।
৪. অতি ছোট দলগুলির ভিড় – সংসদে অনেক ছোট দলের উপস্থিতি কার্যক্রম জটিল করতে পারে।
৫. এলাকাভিত্তিক প্রার্থীর অভাব – ভোটাররা সরাসরি কোনো ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারেন না, ফলে এলাকার সমস্যা নিয়ে সরাসরি দায়বদ্ধতা কমে।
পৃথিবীর বহু দেশে পিআর নির্বাচন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেমন:-১। ইউরোপ:- জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, স্পেন, গ্রিস ২। দক্ষিণ এশিয়া:- নেপাল, শ্রীলঙ্কা ৩। আফ্রিকা:- দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া ৪।অন্যান্য:- ইসরায়েল, নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা।
বেশ কয়েকটি দেশে সরাসরি পিআর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, আবার কোথাও কোথাও মিশ্র নির্বাচন পদ্ধতি (First Past the Post + PR) প্রচলিত। যেমন: জার্মানি ও নিউজিল্যান্ডে সংসদের একটি অংশ সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়, আরেক অংশ পিআর পদ্ধতিতে বণ্টিত হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে “ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট” (First Past the Post) বা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। ফলে একটি দল জাতীয় ভোটে ৪০% পেলেও সংসদে ৬০–৭০% আসন পেতে পারে। এ কারণে অনেক বিশেষজ্ঞ দীর্ঘদিন ধরে পিআর পদ্ধতি বা অন্তত আংশিক পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, এতে সংসদ আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে এবং ছোট দলগুলিও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে।
পিআর নির্বাচন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ রূপ। এটি জনগণের ভোটের প্রকৃত প্রতিফলন সংসদে তুলে ধরে, যদিও এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে বিশ্বের বহু দেশে পিআর ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এই পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান।