আলভী আহমেদ, বুটেক্স প্রতিনিধি । বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে(বুটেক্স) স্কিলস ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস এন্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম (সিসিপ) পরিচালনার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক শিক্ষা, গবেষণা ও বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি ১৩ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এবং সিসিইপ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বুটেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে ভবনটি নির্মিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভবনটি নির্মানের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুমোদন গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং শীঘ্রই নির্মাণকাজ শুরু হবে। গত জানুয়ারিতে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে নির্মান কাজ শুরু করতে দেরী হচ্ছে বলে জানা যায়।
দেশের টেক্সটাইল শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ এক্সিকিউটিভ ও ম্যানেজার তৈরীর লক্ষকে সামনে রেখে এডিবি’র আর্থিক সহায়তায় অর্থ মন্ত্রনালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেসমেন্ট প্রকল্প সেইপ-এর আওতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বুটেক্সে অনুষ্ঠানিকভাবে একটি এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার চালু করা হয় যার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মত পিজিডি ইন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম-এর যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বুটেক্স এ চালু করা হয় স্কিল ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস এন্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম (সিসিইপ) প্রকল্প। প্রকল্পটি পরিচালনা ও এই প্রোগ্রামটি চলমান রাখার সুবিধার্থে এডিবির অর্থায়নে বুটেক্সে এই ভবনটি নির্মাণ করা হবে। ভবনটি ১৫ তলা ভিত্তি বিশিষ্ট হলেও প্রাথমিক ভাবে ১৩ তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে। ভবনটির অবকাঠামোর কৃত্রিম নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে দেখা যায় ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল আধুনিক সুজোগ সুবিধা রয়েছে এবং ভবনটির কাঠামো পরিবেশবান্ধব।
বর্তমানে সিসিইপ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শিক্ষার্থী কল্যান পরিচালক এবং অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান খাঁন। উপ- প্রোগ্রাম পরিচালক হিসেবে আছেন টেক্সটাইল মেশিনারি ডিজাইন এন্ড মেইন্টেন্যান্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. শেখ মো. মমিনুল আলম। সহকারী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) হিসেবে আছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: সাইদুজ্জামান এবং সহকারী পরিচালক (একাডেমিক) হিসেবে আছেন ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: রিয়াজুল ইসলাম।
তবে, এই প্রকল্প প্রণয়ন ও এডিবি’র অনুমোদন পর্যন্ত সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেন ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, এডিবির অর্থায়নে প্রস্তাবিত এই ভবন নির্মাণ প্রকল্পকে আমি আমার ড্রিম প্রজেক্ট হিসেবে বিবেচনা করি। আমি ভবনটির ডিজাইন আমার দেখা চীনের একটি ভবনের সাথে সাদৃশ্য রেখে পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছিলাম যেখানে কমার্শিয়াল সার্ভিস দেয়ার মত একটি আধুনিক ল্যাব, একটা ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, বিজনেস রিসার্চ এন্ড সিমুলেশন ল্যাব, শীততাপ নিয়ন্ত্রীত ক্লাসরুম, সেমিনার হল, এক্সাম গ্যালারি, মাল্টিপারপাস কনফারেন্স হল, আধুনিক লাইব্রেরি, ডে-কেয়ার সেন্টার, অফিস, ক্যাফেটারিয়া সহ একটি ইনডোর প্লে গ্রাউন্ড থাকবে। বুটেক্সের সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম স্ট্রাটেজিক প্ল্যান ২০২৩-৩২ এর আলোকে পরিকল্পনা ছিল এই ভবনেই চালু করা হবে বুটেক্সের প্রথম ইনস্টিটিউট “দি ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট” – সে লক্ষেই ভবনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা সব সময়ই আমার মাথায় ছিল। দুঃখজনক ব্যাপার হল, এই ইনস্টিটিউট স্থাপনের সংবিধি প্রনয়ন থেকে শুরু করে ইনস্টিটিউট স্থাপনে মন্ত্রনালয় ও ইউজিসি’র চাহিত সমস্ত ডকুমেন্ট প্রেরণ ও অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছিল ২০২৪-এর আগস্টের মধ্যে এবং বুটেক্সের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদন ও নির্দেশনা ছিল সিসিইপ প্রকল্পের সমস্ত শিক্ষা কার্যক্রম এই ইনস্টিটিউট এর অধীন চলবে। বুটেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন – কেন এখনো এই ইনস্টিটিউট স্থাপনে ইউজিসি’র অনুমোদন পাওয়া যায়নি?
প্রকল্পটির প্রোগ্রাম ডিরেক্টর অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: মশিউর রহমান খাঁন বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে বুটেক্সে এডিবির অর্থায়নে স্কিল ফর ইন্ডাস্ট্রি কম্পিটিটিভনেস এন্ড ইনোভেশন প্রোগ্রাম (সিসিইপ) প্রকল্প চালু আছে। টেক্সটাইল শিল্পের জন্য দক্ষ পর্যায়ের জনবল তৈরি করাই এর লক্ষ্য। এটি মূলত পিজিডি ইন টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, যা ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। মোট ১০টি ইনটেকের মাধ্যমে ১২০০ শিক্ষার্থীকে নয় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিটি ইনটেকে ১২০ জন করে শিক্ষার্থী অংশ নেবে এবং চারটি ব্যাচে ভাগ হয়ে প্রশিক্ষণ চলবে। এডিবির অর্থায়নে নির্মিত এই ভবনে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ল্যাব, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র ও অন্যান্য সুবিধা একসাথে পাওয়া যাবে।
‘দি ইনস্টিটিউট অফ টেক্সটাইল প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ‘ নামক ইনস্টিটিউটটি চালু করার ব্যাপারে কেন এখনো ইউজিসির অনুমোদন পাওয়া যায় নি এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ইউজিসিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: জুলহাস উদ্দিন বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি আমার প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ এবং অর্জন। নতুন ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে। এখানে টিএসসি, একটি কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরি, শিক্ষার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা এবং একটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট থাকবে। এই ইনস্টিটিউটে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তিরও ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, পুরো কাজটি এডিবির নিজস্ব টিম দ্বারা সম্পন্ন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তাই দুর্নীতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। পুরো অর্থ শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে এবং তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখা হবে। তবে কাজ শুরু হওয়ার আগে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল যা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মতে, নতুন ভবনটি নির্মাণ হলে বুটেক্স শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমেরও সুযোগ পাবে। এতে দেশের টেক্সটাইল শিক্ষা ও শিল্প খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
উল্লেখ্য ২০২৮ সালের ২১ডিসেম্বরের পর ভবনটি মালিকানা বুটেক্সের অধীনে চলে আসবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনটি ব্যবহার করতে পারবে।