গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েক দিনের মধ্যেই বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার আগে বিবিসিকে দেওয়া ইমেইল সাক্ষাৎকারে তিনি বিচার প্রক্রিয়াকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টের সাজানো প্রহসন’ বলে মন্তব্য করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষ সোমবার হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করেছে। মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে গত বছরের বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ তিনি ব্যক্তিগতভাবে দিয়েছিলেন। এসব অভিযোগ তিনি ‘সুস্পষ্টভাবে’ অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা হিসেবে পরিচালিত সহিংসতায় এক হাজার চারশ’ পর্যন্ত মানুষ নিহত হতে পারে। আদালতে উপস্থাপিত একটি যাচাইকৃত অডিওতেও ২০২৪ সালের জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
এ বছরের জুলাইয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ পলাতক কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে এবং মামুন তার ভূমিকার জন্য দোষ স্বীকার করেছেন, যদিও তার সাজা এখনও ঘোষণা হয়নি।
হাসিনার দাবি, তার অনুপস্থিতিতে চলমান বিচার একটি ‘পূর্বনির্ধারিত দোষী সাব্যস্ত রায়ের’ দিকে এগোচ্ছে এবং তিনি নিজের বক্তব্য উপস্থাপন বা আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ পাননি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আওয়ামী লীগকে ‘নিশ্চিহ্ন’ করার উদ্দেশ্যে এসব মামলা করেছে।
তার আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের ন্যায়বিচার নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে জরুরি আপিল দাখিল করেছেন। অন্যদিকে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে।
বিবিসির প্রশ্নে হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও অস্বীকার করেন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশে গোপন কারাগারের অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে—যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের অবৈধ আটক বা হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তিনি এসব সম্পর্কে ‘জানতেন না’। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগও তিনি নাকচ করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে আরেক মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার চলছে, যা তিনি অস্বীকার করছেন। সূত্র- বিবিসি