যশোরের শিল্প-বণিজ্য ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ায় শুরু হয়েছে ইপিজেড স্থাপনের কার্যক্রম। বর্তমানে চলছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। ফলে অভয়নগর উপজেলায় অর্থনৈতিকভাবে নব দিগন্তের সূচনা হতে চলেছে। ৫শত ০৩একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে ইপিজেড।
এর ফলে একদিকে যেমন নওয়াপাড়া নদী বন্দর, রেলওয়ে ও যশোর-খুলনা মহাসড়কের ত্রিমুখী অবস্থানকে আরও সমৃদ্ধ করছে। অন্যদিকে সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত হতে চলেছে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার। সেই সাথে দুঃখ ঘুচবে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকার লাখ লাখ মানুষের। ভবদহের জলাবদ্ধ বিলের ওপর নির্মিত হতে চলেছে এই ইপিজেড।
ইপিজেড স্থাপনে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে দেড় লাখ মানুষের। আর এখানে কর্মসংস্থানে প্রাধান্য পাবে ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধ এই বিলসহ আশপাশের অকৃষি বিলের জমি অধিগ্রহণ করে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ‘যশোর ইপিজেড’ নির্মাণের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সেই সাথে এ অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণ করতে জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
৫শত ০৩ একর জমির ওপর এই ইপিজেড নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। ইপিজেড নির্মিত হলে সরাসরি ভাগ্য বদলাবে পাঁচ লাখ মানুষের। আর পরোক্ষভাবে নওয়াপাড়াসহ অভয়নগরের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃতি ঘটার মাধ্যমে প্রায় ১০লাখ লোক দেখবে নতুন স্বপ্ন। এক কথায় অভয়নগরে যশোর ইপিজেড নির্মাণের ফলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের চিত্র। সেই সাথে মোংলা ও বেনাপোল বন্দরের সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র বদলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ফলে সমৃদ্ধির এক নতুন পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে বলে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের মানুষ।
সম্প্রতি যশোর ইপিজেডের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল কবির স্বাক্ষরিত চিঠি যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, যশোর জেলায় শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া এলাকায় চাষাবাদ অনুপযোগী জলাবদ্ধ খাল-বিলে যশোর ইপিজেড স্থাপন করা হবে। এ জন্য অভয়নগরের মাগুরা, রাজাপুর, প্রেমবাগ, চেঙ্গুটিয়া, বাহিরঘাট, বালিয়াডাঙ্গা, মহাকাল ও আমডাঙ্গা মৌজার ৫শত ০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, যশোর সদর, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার মধ্যবর্তীস্থানে ভবদহ এলাকা। ভবদহ বিল পাড়ের ১২০টি গ্রামের অন্তত ৫লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার শিকার। এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে এখনও জমে আছে পানি। কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলায় অন্তত ৪৫টি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা পানিতে নিমজ্জিত। এলাকার কবরস্থান ও শ্মশানঘাটে পানি জমে রয়েছে। যে কারণে ওই এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য ও বনগ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, ভবদহের স্লুইসগেট গেটে পলি জমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। যে কারণে ধলির বিলসহ দক্ষিণের প্রায় ২৭টি বিলের পানি জমে আছে। এসব বিলপাড়ের মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কৃষিজমি পানির নীচে থাকায় হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
ভবদহ এলাকার অসহায় মানুষ বিলে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে, শাপলা ও কলমি শাঁক তুলে হাট-বাজারে তা বিক্রি করে কোনো রকমে দিনযাপন করে চলেছে। এসব দু:খের পর এই এলাকায় ইপিজেড স্থাপিত হলে লাখো মানুষ কাজ পাবে। ইপিজেডের কারখানা মালিকেরাও স্বল্পমূল্যে শ্রমিক পাবেন। এতে উভয় পক্ষই লাভবান হবেন।
প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মফিজ উদ্দিন বলেন, যুগ যুগ ধরে যশোরের দুঃখ হয়ে আছে এই ভবদহ অঞ্চল। বিলপাড়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন। তাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। এসময় এ অঞ্চলে ইপিজেড স্থাপিত হলে এলাকার অর্থনীতির চাকা আবার সচল হয়ে উঠবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. তানজিলা আখতার জানান, সরকারি নির্দেশে ইপিজেড স্থাপনে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। ৫শত ০৩একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আমিনুর রহমান জানান, অভয়নগর উপজেলায় স্থাপিত এই ইপিজেডের ফলে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। শুধু অভয়নগর নয়, যশোর জেলার মধ্যে এটা সরকারের একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে বসবাসকারী গরীব ও অসহায় মানুষের দু:খ অনেকটা লাঘব হবে।
এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভবদহ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন বিধি মোতাবেক ভূমি অধিগ্রহণসহ যাবতীয় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
ইপিজেড স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল কবীর বলেন, যশোর ইপিজেড স্থাপনের জন্য ৫শত ০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য যশোরের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। যশোর ইপিজেড, দেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাভারের ইপিজেডের মতোই স্থাপিত হবে। এতে করে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক উন্নতি ঘটবে।
ইপিজেডের কারনে কমপক্ষে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে ভবদহ অঞ্চলের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে যাবে। এই প্রকল্পকে ঘিরে এই এলাকার নদী ও খাল-বিলেরও উন্নতি ঘটবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সব মিলিয়ে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে নতুন এক দিগন্ত।