1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি তপন মন্ডলের মামলা বাণিজ্য; ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ শিক্ষক - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শফিকুল আলমের শাস্তি দাবি: মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সরব প্রতিবাদ গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু, হামাসের প্রস্তুতি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণায় শ্যামনগরে আনন্দ মিছিল কুড়িগ্রামে হত্যা মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা সাজু গ্রেফতার জেপিসি কমিটির বিরুদ্ধে মুসলিমসহ ভিন্নমত দমনের অভিযোগ মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীদের জন্য মসজিদ-মাদ্রাসা ও ইমামবাড়ীর দরজা খুলে দিলেন মুসলিমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াইয়ে রণক্ষেত্র ফুসরা গ্রাম, আহত ৮ ফাঙ্গিও-মসের চালানো মার্সিডিজ স্ট্রিমলাইনার বিক্রি হলো ৬৫০ কোটি টাকায় দাবি না মানলে রেললাইন ছাড়ব না, শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি শেখ হাসিনাকে এক শ কোটি টাকা ঘুষ দেয়া, সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি তপন মন্ডলের মামলা বাণিজ্য; ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ শিক্ষক

  • সর্বশেষ আপডেট : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১১৫ জন খবরটি পড়েছেন
তপন মন্ডল -ছবি বিডিটেলিগ্রাফ

প্রধান শিক্ষক হয়েও সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি তিনি!
স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর (যশোর) থেকে।
তপন মন্ডল। পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আগে ছিলেন সহকারী শিক্ষক। বর্তমানে চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক। কর্মরত রয়েছেন অভয়নগর উপজেলার আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৪ সালে সহকারী শিক্ষক সমাজ নামে শিক্ষকদের একটি সংগঠন তৈরি করে তার কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন তিনি।

এরপর শিক্ষকদের কল্যাণে হাইকোর্টে দু’টি মামলা করেন নিজে বাদী হয়ে। ওই মামলা হয় তার জন্য ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’। দু’টি মামলা পরিচালনার কথা বলে তপন মন্ডল ও তার কয়েক সহযোগী সারাদেশের সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ দীর্ঘ ১০বছরেও সেই দু’টি মামলায় কোনো ফলাফল হয়নি। কোনো উপকৃত হননি সহকারী শিক্ষকেরা। উপরন্তু ওই মামলা দু’টি ২০১৩ সালে সরকারি হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের কাছে বিপুল অঙ্কের টাকায় ‘বিক্রি’ করেছেন বলে সারাদেশের একাধিক জেলার নেতারা অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে এটি নিয়ে তোপের মুখে রয়েছেন ধান্ধাবাজ খ্যাত তপন মন্ডল।

বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায় জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকদের সাথে সহকারী শিক্ষকদের ব্যাপক বেতন বৈষম্য। একইসাথে ২০১৩ সালে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হয় ওইসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সরাসরি প্রধান শিক্ষক হয়ে যান, যা চাকরিবিধির লঙ্ঘন। এটি হলে পুরানো শিক্ষকদের প্র্রধান শিক্ষক পদে যেতে জটিলতা তৈরি হবে। এই দু’টি ইস্যুকে সামনে রেখে ২০১৩সালে সারাদেশের সহকারী শিক্ষকদের সংগঠিত করে বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজ নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। যার কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হন নড়াইলের উজ্জ্বল রায় এবং সদস্য সচিব হন কেরানীগঞ্জের শাহিনুর আল-আমিন। কমিটি করার কিছুদিন পর আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায় পাশের জেলা যশোরের অভয়নগর উপজেলার তপন মন্ডলকে সংগঠনে ডেকে নেন পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার কারণে। তপন মন্ডল সংগঠনে ঢোকার মাত্র দু’মাসের মাথায় বিতর্কিত কর্মকান্ড শুরু করেন। এরই মধ্যে সদস্য সচিব শাহিনুর আল-আমিনের সাথে মতের পার্থক্য শুরু হয় আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়ের। একপর্যায়ে পদত্যাগ করেন উজ্জ্বল রায়।

এর পরপরই চোখ উল্টে দেন তপন মন্ডল। তিনি ২০১৪ সালে তার সাগরেদদের ঢাকায় ডেকে কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ বাগিয়ে নেন। আর সাধারণ সম্পাদক হন গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার আসাদুজ্জামান। কমিটি করার পরপরই নেমে পড়েন ধান্ধাবাজিতে। প্রথমে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করার নামে হাইকোর্টে মামলা করেন। এই মামলা পরিচালনার নামে সারাদেশে একান্ত কিছু লোকের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন লাখ লাখ টাকা। এরপর নতুন করে সরকারি হওয়া স্কুলের শিক্ষকরা যাতে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হতে না পারেন সেই কথা বলে আরেকটি মামলা করেন তিনি। মামলা নম্বর হচ্ছে ৪০৩৮ ও ৪০৩৯। এই মামলার পর পুরানো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক প্রধান শিক্ষক হওয়ার তালিকায় ছিলেন তাদের কাছ থেকে নতুন করে অর্থ আদায় শুরু করে এই চক্র।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশ থেকে যারা তাকে অর্থ সংগ্রহ করে দেন তাদের মধ্যে যশোরের কেশবপুরের সুদেব দেবনাথ, চৌগাছার অভিজিৎ, ঝিকরগাছার ইকবাল হোসেন, বরিশালের জাফর ও বগুড়ার এনামুল হক উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকজন বিপুল অঙ্কের টাকা সংগ্রহ করে তপন মন্ডলের হাতে তুলে দেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে, তাদের নাম সংগ্রহ করা যায়নি। সূত্রের দাবি, তপন মন্ডল সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছেন উত্তরের জেলাগুলো থেকে। শিক্ষকরা যে দুই আশায় তপনের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েছিলেন তাদের সেই আশা দীর্ঘ ১০ বছরেও পূরণ হয়নি। কেবল পূরণ হয়নি তাই নয়, ইতোমধ্যে তপন মন্ডল নতুন সরকারি শিক্ষক নেতাদের কাছে মামলা দু’টি ‘বিক্রি’ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নতুন সরকারি শিক্ষকদের নেতা মুনছুর আলীর সাথে বিপুল অঙ্কের টাকায় মামলা চালাবেন না বলে সমঝোতা করেছেন এই তপন মন্ডল। এ কারণে তিনি মামলা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

একইসাথে যারা ওই মামলা তাদের খরচে পরিচালনা করতে চান তাদেরকে কোনোভাবেই সহযোগিতা করছেন না। তপন মন্ডলের কাছে মামলার কাগজপত্র ও পাওয়ার অব এটর্নি চেয়ে পাননি বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পিরোজপুর জেলার আজাদ খান। একই অভিযোগ করেছেন যশোরের কয়েকজন শিক্ষক নেতাও। তাদের অভিযোগ, ১০বছর ধরে তপন মন্ডল কেবল অর্থ হাতিয়েছেন, মামলার দিকে কোনো নজর দেননি। তপন মন্ডলের বিরুদ্ধে কেবল অর্থ হাতানোর অভিযোগ নয়, অভিযোগ রয়েছে সাংগঠনিক অপকর্মেরও। সহকারী শিক্ষক সমাজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী,কমিটি হবে তিন বছরের। বিভিন্ন পদে থাকবেন সহকারী শিক্ষকরাই। অথচ ২০১৪ সালে সভাপতি হওয়ার পর পদ আর ছাড়েননি বর্তমানে চলতি দায়িত্বের এই প্রধান শিক্ষক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সহকারী শিক্ষক সমাজের এই ধুরন্ধর সভাপতি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিরও নেতা। কেবল নেতা নন, রীতিমতো অভয়নগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকও! যা কোনোভাবেই হতে পারে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একইভাবে তার এক ‘ঘনিষ্ট অনুচর’ খ্যাত সহকারী শিক্ষক সমাজের যশোর জেলা শাখার সভাপতি সুদেব দেবনাথ কেশবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। যা, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী’ ও হাস্যকর। কয়েক চামচার সহযোগিতায় তপন মন্ডল ইচ্ছেমতো শিক্ষক সমাজ চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে অনেকেই এই সংগঠন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে সূত্রের দাবি।
মামলা নিয়ে তপন মন্ডলের ধান্ধাবাজি ফাঁস হয়ে গেলে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ছি! ছি! শব্দ।

তপন মন্ডলের ধান্ধাবাজি নিয়ে আজাদ খানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিরূপ মন্তব্য করেছেন অনেক শিক্ষক। এসএম খায়রুল কবি লিখেছেন, ‘উনার ধূর্তামি শেষ হবার নয়।’ মোস্তাক আহমদ লিখেছেন, ‘অনেক বিরাট মেপের লেতা!’ জামিল আহমেদ লিখেছেন, ‘এই মন্ডলের কারণেই সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন ফলপ্রসূ হয় নাই এবং আমরা ১১তম গ্রেড আদায় করতে পারি নাই।’ উজ্জ্বল রায় লিখেছেন, ‘ভাই দুর্গন্ধ বেশি নাড়লে গন্ধই ছড়াই।’ রিন্টু রাখশিট রিন্টু লিখেছেন, ‘মন্ডল সাহেব ফাঁকা আওয়াজ তুলে নির্লজ্জের মতো পা টিপে টিপে আমাদের কাছে ঘেঁষতে উঁকিঝুঁকি মারে বেহায়ার মতো। মন্ডল গংদের দেশের শিক্ষক সমাজ বহু পূর্বেই বয়কট করেছেন। অতএব ফাঁকা বুলির বেইল শেষ।’ মাহাবুবুর রহমান লিখেছেন, ‘ঐ মামলার আরজির কপি আমার কাছে আছে। তার সাথে অনেক কথা, যুক্তি, তর্ক হয়েছিল। এমনকি মামলার বিজ্ঞ আইনজীবী ইদ্রিসুর রহমান সাহেবের সাথে একাধিকবার আমার কথা হয়েছে। মামলাটিতে সুষ্ঠু তদ্বিরের অভাব বিদ্যমান। খরচ দিয়েছিতো মনে অনেক কষ্ট। মিজানুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বড্ড ধূর্ত, ভন্ডামিতে পরিপূর্ণ।’ মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, ‘২০১৪ সালের মামলাটিতো ওনার পুঁজি। ওইটা দিয়েইতো উনি ব্যবসায় সফল।’ গাজী সালাহউদ্দিন লিখেছেন মন্ডল সাহেব একজন মিথ্যুক। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললাম।’

কল্যাণ ব্রত বিশ্বাস লিখেছেন, ‘এই মন্ডলের কারণেই ২০১৭ সালে সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের সুফল ভোগ করতে পারিনি। এমন শিক্ষক আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’ এরশাদ আলী লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের আন্দোলনের দিন সকাল ১০টায় মন্ডল সাহেব ব্যাগ গুছিয়েছিলেন এক অদৃশ্য কারণে।’ সরোয়ার লিটন লিখেছেন, ‘সকল দালাল বাটপার নিপাত যাক।’ মাস্টার তরিকুল লিখেছেন, ‘যশোরের দুঃখ এই ভন্ড মন্ডল।’

এএইচএম আসাদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘২০১৭ সালের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলনের সুফল ভোগ করতে পারিনি এই মন্ডলদের কারণেই। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি ওদের কান্ড। এমন শিক্ষক সমাজের জন্য লজ্জাজনক।’ শ’শ’ শিক্ষক তপন মন্ডলের কুকীর্তি নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। এসব বিষয়ে তপন মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই দু’টি মামলায় বাদী ছিল ১৩জন। আইনজীবীর সাথে দু’লাখ টাকায় চুক্তি হয়। আমরা এক লাখ টাকা দিয়েছিলাম। বাকি এক লাখ টাকা দিতে পারিনি।’ বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে ১০ বছর ধরে আছেন কীভাবে? জানতে চাইলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন এই ধান্ধাবাজ। তিনি সাংবাদিককে বলেন, ‘আপনি অঙ্ক জানেন। হিসেব করতে পারেন। আমি ১০ বছর ধরে রয়েছি বলছেন।’ একইসাথে দু’ সংগঠনের নেতা কীভাবে হলেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা আজাদ খান বলেন, ‘নতুন সরকারি হওয়া শিক্ষকরা পদোন্নতির ব্যাপারে গোপনে মামলা করে রায় করান। আমরা জানতে পেরে পাল্টা মামলা করে মাত্র চার মাসের মধ্যে তা স্থগিত করেছি। আমরা চার মাসে পারলে তপন মন্ডল কেন ১০ বছরে পারলেন না? তিনি মামলা চালাচ্ছেন না। আবার মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং পাওয়ার অব এটর্নি চাইলে তিনি রহস্যজনক কারণে তাতে রাজি হচ্ছেন না। শুনেছি নতুন সরকারি শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে চুপ হয়ে গেছেন।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews