প্রতিনিধি, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)। চিংড়ি ঘেরের মধ্যে নৌকায় স্ত্রীকে বেঁধে রেখে কৃষকলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাত ১২টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম আবুল কাশেম (৫২)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামের নেছার আলী কাগুচীর ছেলে ও গাবুরা ইউনিয়ন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক।
গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, একই গ্রামের দুদু গাজী, তফি গাজী ও শাহাদাৎ গাজীর কাছ থেকে তার দাদা গহর আলী খঁা ও দাদী ঝুড়ি বিবি ১৯৪৯ সালে ২৫ বিঘা জমি কেনেন। ওই জমি ২০১০ সালের দিকে দুদু গাজীর ছেলে লোকমান গাজী ও তার চাচাত ভাইয়েরা দাবি করে আসছিল। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ নেতা জিএম শফিউল আজম লেনিনের ভাই টিটু ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার সহযোগিতায় জুন মাসে লোকমান, মুছা, শোকর আলী, আবু সাঈদসহ কয়েকজন ওই জমির কিছু অংশ দখলে নেয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তৎকালিন সাংসদ জগলুল হায়দারকে অবহিত করা হয়। পরে তারা জবরদখলকৃত জমি উদ্ধার করেন।
এর জের ধরে ২০১৫ সালের ১০ জুলাই খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবঁাধের পাশে ঘেরের মধ্যে তার (হাবিবুল্লাহ) চাচাত ভাই শফিকুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে লোকমান গাজী, সেকেন্দার আলী, মিজানুর রহমান, মুছা গাজী, বায়েজিদসহ ৩৭ জনের নামে থানায় মামলা (জিআর- ৩১১/১৫ শ্যামঃ) দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালিন শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক শহীদ হোসেন এজাহারভুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে অভিযোগ গঠণের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন আছে।
শফিকুলকে হত্যার পর তিনি ওই ২৫ বিঘা জমি একই গ্রামের আবুল কাশেম কাগুচীর কাছে লীজ দেন। সেখান থেকেই আবুল কাশেম ওই জমিতে মাছ চাষ করে আসছিল।
নিহত আবুল কাশেমের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গাবুরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান গাজী ও শফিকুল হত্যা মামলার আসামীরা তার স্বামী আবুল কাশেমকে গত কয়েক বছরে তিনবার হত্যার চেষ্টা করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি ও তার স্বামী আবুল কাশেম বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে ঘেরে পাতা আটল থেকে মাছ ঝাড়তে যান। তারা আটল ঝাড়ার জন্য নৌকায় উঠলে লোকমান, মুছা, শোকর আলী, আবু সাঈদ, আনিসুর, সালাউদ্দিন, সেকেন্দার, সুমনসহ কয়েকজন তাকে (ফিরোজা) ঘেরের মধ্যে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত ডিঙি নৌকার মধ্যে হাত, পা, চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে রাখে। পরে তার স্বামীকে নৌকা থেকে নামিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ঘেরের পানিতে পুঁতে ফেলে।
নিহত আবুল কাশেমের ভাই জাভেদ আলীর স্ত্রী রেবেকা খাতুন জানান, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ১৭ মিনিটে একটি মোবাইল থেকে তিনি জানতে পারেন যে তার দেবর আবুল কাশেমকে ঘেরের মধ্যে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবঁাধের পাশে কুপিয়ে লাশ পুতে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি সম্ভাব্য সকলকে অবহিত করে স্বামী জাভেদ, ছেলে আবু তালেব, দেবরের ছেলে আবু হুরাইরাকে নিয়ে ঘেরে যান। সেখানে নৌকার মধ্যে থাকা ফিরোজার বঁাধন খুলে দেন তারা। কাশেমকে ঘেরের মধ্যে কাদার মধ্যে পোতা অবস্থায় দেখতে পান।
স্থানীয়রা জানান, হাবিবুল্লাহ বাহার বিএনপিপন্থী হওয়ায় ২০১৫ সালে তাদের জমির কিছু অংশ লোকমান ও মুছাসহ কয়েকজন দখল করে নেওয়ায় তিনি কৌশলে সাংসদ জগলুল হায়দারের কাছেরজ লোক বলে পরিচিত আবুল কাশেমকে ওই জমি লীজ দেন। কাশেম বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করে মাছ চাষ শুরু করেন। একপর্যায়ে জগলুল হায়দার সাংসদ না থাকায় লেনিন পন্থি লোকমান, মুছা, সেকেন্দার ও তাদের সহযোগীরা ওই জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহষ্পতিবার রাতে কাশেমকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাবুরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান গাজী জানান, তিনি আবুল কাশেম এর মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। তবে তিনি বৃহষ্পতিবার রাতে এলাকায় ছিলেন না।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে আবুল কাশেমকে প্রতিপক্ষরা হত্যা করেছে বলে নিহতের স্বজনদের অভিযোগ। শুক্রবার ভোরে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।