।। মাসুম বিল্লাহ ।।
সংস্কৃতি জাতির আয়না স্বরূপ। যে সংস্কৃতি যতো উন্নত সে সংস্কৃতি ততো পরিশীলিত ও মার্জিত। সুস্থ সংস্কৃতি দেশ ও জাতি গঠনের হাতিয়ার। অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতি কেবল সে জাতির দুর্দশাকে নয় বরং হীন মনোবাসনা প্রকাশ করে। যার নির্দশন পত্র পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমে দেখা যায়। গুম, খুন, ধর্ষণ, প্রেমের প্রস্তাবে রাজিনা হলে অপহরণ;
আজকাল আবার জনসম্মুখে ছুরি বা চাপাতি দিয়ে কোপাতেও দেখা যাচ্ছে। এই সংস্কৃতির আগ্রাসনে ধ্বংস হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ। শিশু কিশোররা নিরাপদ নয় নোংরা সংস্কৃতির অশ্লীলতা থেকে। যার নির্দশন চোখে পড়ে রাস্তায় বের হলে। বিভিন্ন দেয়াল, বৈদ্যুতিক পিলার এমন কি যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অশ্লীল সিনেমার কুরুচিপূর্ণ চিত্র। স্কুল কলেজে যাত্রা কালে শিক্ষক ছাত্র এমন কি সকল শ্রেণির মানুষের সহজে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।
জানিনা এ কুরুচিপূর্ণ চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মতারা কী বোঝাতে চান? এছাড়া এসব তাদের মনের উৎকর্ষতার পরিচয় কী না এসব ছবি তা জানিনা। এসব চিত্র থেকে কী যে শিখছে ছেলে মেয়েরা তা তারাও জানে কী না তাও জানি না। তবে আমাদের শঙ্কিত করে। ভালো কোন চিত্র দিলে সিনেমার ক্ষতি কী তাও আমার মত দূর্বল চিত্তের মানুষের বোঝা মুশকিল। পারী সম্পর্কে লেখক বলেছে প্রতিদিন একটু একটু করে দেখছি আর শিখছি, দিন দিন একটু একটু করে বড় হচ্ছি কিন্তু বুড়ো হচ্ছি না। তেমনি আমাদের ছেলেমেয়েরা একটু একটু করে দেখছে,
দিন দিন পাকছে, একটু একটু করে বড় হচ্ছে কিন্তু অশ্লীলতা যাচ্ছে না |
সমাজের আদেশ তুমি দশজনের একজন হও, আর কালচারের আদেশ তুমি দশের এগারো হও (রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী)। আমার সারা জীবন ২য় পন্থা পছন্দ। কিন্তু প্রথম পন্থাটা সমাজ স্বীকৃতির অন্যতম মাধ্যম। গত ২/৩ বছর ধরে নায়কদের দাড়ি রাখার ট্রেন্ট চালু হয়েছে। তাই যুবক ছেলেরা দাড়ি রাখছে। অন্যকে দেখে এ যেন নিজেকে বিসর্জন দেওয়ার নতুন পন্থা। দাড়ি রাখা শরিয়ত সম্মত। কিন্তু কতজন শরিয়তের বিধান পালনের জন্য রাখছে তা বলা অহেতুক।
মাইকেলের মতো ইয়ং বেঙ্গলকে অনুকরণ করা জাতি আমরা, কিন্তু মাইকেলের ভুল ভাঙ্গা জাতি হতে পারলাম না। বিশেষ করে নব্য কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া বা সমবয়সী সকলে নিজেকে কেবল গড্ডলিকাপ্রবাহে গা ভাসাচ্ছে। তাদের চলা, বলা, রং, ঢংয়ে পরিচয় হয়ে যায় যে সময়ের সেরা বুদ্ধিমান, স্টাইল হিরো। আর হিরোইনের কাছেতো এগুলো স্মার্টেনস। এদের মাথা গরম করা হ্যাট, পা আটা, ছেড়া প্যান্ট এখোন ফ্যাশান। কিন্তু মাথা ঠান্ডা করার জন্য চপচপ করে তেল দেওয়া ঢিলেঢালা পোশাক হচ্ছে খ্যত।
বন্ধু বান্ধবীর মেসে যাওয়া, বান্ধবীর বন্ধুর বেড, রুমে আসা, বিড়ি, মদ এসবও ট্রেন্ট। মুরব্বিদের সালাম বিনিময় এখোন সেকেলে, তবে হাই, হ্যালো সময়োপযোগী। মুরব্বিদের সাথে কথা বলতে এখোন চোখ নিচে করা অভদ্রতা,
চোখে চোখ রেখে কথা বলা ভদ্রতা। পাশ্চাত্যের অনুকরণ আধুনিকতার মানদণ্ড হিসাবে বিবেচ্য যেখানে সেখানে নারী নিষ্পেষিত। চারিদিকে সামনাধিকারের বুলি আওড়িয়ে উলঙ্গতা এখন সমানাধিকার। সংবাদমাধ্যম থেকে নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, শপিংমল, রিসিপশন এখোন কোমল কন্ঠের, বুক টানটান উন্মাদনা স্মার্ট ও রুচিশীলতার পরিচয়। সমাজের নিয়মের বাইরে কেউ টেকেনি। কিন্তু সমাজের ভুল নিয়মও কোনদিন টেকেনা। আর ভুল সময়ে আমি সর্বদা সেকেলে, ত্রিবেদীর দ্বিতীয় পথের পথিক। একটা কথা স্মরণ না করিলে নয় “অতিকায় হস্তিলোপ পায়িয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে। “