অবশেষে উপজেলার খানপুর বাজারের উত্তর পাশে চিত্রা নদীতে নিজেদের অর্থায়নে অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।
এলাকার মানুষ, বাজার কমিটি ও তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গ্রামের মানুষের ঝাঁড়ের বাঁশের খুটি আর চাঁদা তোলা টাকায় কেনা কাঠের তক্তার ছাউণী দিয়ে সুন্দর অস্থায়ী সেতু নির্মান করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থায়ী সেতু না থাকায় এলাকাবাসির একমাত্র ভরসা ছিলো নিজেদের তৈরী বাঁশের সাঁকো। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হয় ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো দিয়েই কয়েকশ শিক্ষার্থীরাও পারাপার হয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা করে থাকে।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের খানপুর বাজার সংলগ্ন চিত্রা নদীর ওপর নির্মিত এ সাঁকোটিই পারাপারের একমাত্র ভরসা দু’পারের বাসিন্দাদের। বিশালাকৃতির ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হওয়ার সময় ভয়ে থাকে সবাই। পা পিছলে পড়ে গিয়ে ঘটে দূর্ঘটনা। সাঁতার না জানা শিক্ষার্থীদের নিয়ে আশংকায় থাকতে হয় অভিভাবক ও শিক্ষকদের। এখানকার বাসিন্দাদের এমন দূর্দশা লাঘবে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার আবেদন -নিবেদন করেছেন তবে আশ্বাস মিললেও মেলেনি ব্রিজ । এমনকি সাঁকো নির্মাণে সরকারি কোন অনুদানও মেলেনি। প্রতিবছর দু’পারের বাসিন্দারা সেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুটি। এটি তত্তাবধান করে থাকে খানপুর বাজার কমিটি।
একপর্যায়ে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে গেলে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ চরমে পৌছে যায়। তবে স্কুল-মাদ্রাসা করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকায় সবাই নীরবে দুর্ভোগ সইতে থাকেন।
সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের এই দূর্ভোগ লাঘবে এলাকার তরুণ সমাজ এগিয়ে আসেন। তারা নিজেদের উদ্যোগে চিত্রা নদীর উপর স্থায়ী সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেন। একাজে খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম খান,খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেলিম হোসেন,বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক হারুন খান স্থানীয়ভাবে কিছু টাকা সংগ্রহ করে নদীর দুই পাশে মাটি ভরাট করে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেন। মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়।
কিন্তু সে উদ্যোগে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বাঘারপাড়া উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আফরোজ উদ্যোক্তাদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মালামাল সরিয়ে কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ায় শুভ কাজের সমাপ্তি ঘটে। উদ্যোক্তাদের সংগৃহীত ইট-বালু-লোহালক্কড়সহ অন্যান্য মালামাল স্বল্পমূল্যে বিক্রী করে দেন। এতে করে হতাশ হয়ে পরেন এলাকাবাসী ।
বাজার কমিটির সভাপতি অশোক বিশ্বাস বেশ আক্ষেপ নিয়ে জানান,সপ্তাহে দু’দিন শুক্র ও সোমবার খানপুরে হাট বসে। নদীর উত্তর পাশের শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আসেন এ হাটে । এছাড়া কয়েকশ শিক্ষার্থী পার হয় এ সাঁকো দিয়ে। বাজার কমিটির সেক্রেটারী মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন “ সাপ্তাহিক হাট বাদেও প্রতিদিন বৈকালীন বাজার বসে।বাজার বাদেও দিনের বেলা সকাল থেকে রাত অবধি প্রায় সহস্রাধিক লোকের আনাগোনা চলে এ বাজারে। বাজারের দক্ষিনপার্শ্বে রয়েছে ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-প্রাইমারী,হাইস্কুল ও দাখিল মাদ্রাসা। এসমস্যা সমাধানের জন্যই আমরা নিজেদের অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের আশা পূরণ হলোনা।
উদ্যোক্তরা জানান, খানপুর চিত্রা নদী পার হলেই উত্তরে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সীমাখালি,কাতলী,ছয়ঘরিয়া হরিশপুর,খোলাবাড়িয়া,আড়ুয়াকান্দি ও পাঁচকাউনিয়া গ্রামের অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন পারাপার হয় এ সাঁকো দিয়ে। এছাড়া বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর সিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসা, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও খানপুর সরকারি প্রাথমিক দ্যিালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে পারপার হতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাঁকো থেকে ছিটকে পড়ে আহত হয়েছে ।
তারা জানান, পিছনের কথা ভূলে নিজেদের সমস্যা লাঘবে আবার সবাই একত্রিত হয়ে প্রশাসনের বাঁধার কারনে স্থায়ী সেতুর জায়গায় স্ব-উদ্যোগে কাঠ-বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করেছি। বিশাল আকারের এই সেতু নির্মাণে তাদের প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান । দীর্ঘদিন পরে নদীর উপর অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করায় এলাকাবাসী খুব খুশি । ইতোমধ্যে স্কুল খুলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরাও তাদের পারাপারের সমস্যা সমাধান ভীষন খুশি।