বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা এসব ব্যাংকের সম্মিলিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ্যে আসে, যার জেরে এ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
একীভূত হওয়া পাঁচটি ব্যাংক হচ্ছে— ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। যদিও এক্সিম ব্যাংক এই মার্জারের বিরোধিতা করেছে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (AQR) অনুযায়ী তাদেরও ৫২ শতাংশ ঋণ অনাদায়ী।
এই পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত আমানতের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা, বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট ঋণের প্রায় ৭৭ শতাংশই অনাদায়ী। এর বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন মাত্র ৫ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ইতোমধ্যে পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং নতুন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোয় গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৯২ লাখ, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। কর্মীদের অনেকে চাকরি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন, আর গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আমানত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ।
অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “শুধু মার্জ করলেই হবে না, এটি হতে হবে বাস্তবভিত্তিক। যদি সরকার সঠিকভাবে দায়িত্ব নেয়, তবে এটি হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আশ্বস্ত করেছেন যে, এই প্রক্রিয়ায় কারও চাকরি যাবে না; কেবল অতিরিক্ত শাখাগুলো শহর থেকে গ্রামে স্থানান্তর করা হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে পুনর্গঠনের আওতায় আনতে হয়। এই পাঁচ ব্যাংকই সেই সীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সফলভাবে এই মার্জার বাস্তবায়িত হলে ব্যাংক খাতে আবারও আস্থা ফিরে আসতে পারে এবং গ্রাহকদের আমানত নিরাপদ থাকবে।
এটি বাস্তবায়ন হলে এই একীভূত ব্যাংকই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক— যার থাকবে ৭৭৯টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০টি এজেন্ট আউটলেট ও এক হাজারের বেশি এটিএম বুথ।