সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ আদায়, শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট গাইড বই কিনতে বাধ্য করা, আইসিটি ফান্ড থেকে এসি ক্রয়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের দ্রুত তদন্ত ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকরা।
বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নেই। সিনিয়র শিক্ষক আলাউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারীদের।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, ২০২৪ সালের জুনে সর্বশেষ নিয়মিত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিদ্যালয়ের ফান্ডে ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আরও ৩১ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়। সব মিলিয়ে ফান্ডে থাকার কথা ছিল প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৪০ লাখ। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, ভুয়া বিল দেখিয়ে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আলাউদ্দিন।
গত বছর নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষার ফি ছিল ৩৫০ টাকা। আলাউদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর তা দ্বিগুণ করে ৬৭০ টাকা করা হয়েছে। অথচ সাতক্ষীরার অন্য সরকারি স্কুলগুলোয় ফি মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা ও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের যোগসাজশে পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছে।
গাইড বই নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আলাউদ্দিন ও সিনিয়র শিক্ষক রবিউল ইসলাম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেকচার ও পাঞ্জেরির কাছ থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওই সব গাইড কিনতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আইসিটি ফান্ড থেকে টাকা তুলে তিনটি এসি কিনে নিজের কক্ষে লাগিয়েছেন আলাউদ্দিন। প্রতিটি এসির প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দেখিয়ে ভাউচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।টিফিনের টেন্ডারেও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষকরা বলেন, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের আয় বাড়লেও কর্মচারীদের বেতন কমানো হয়েছে। আগে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা, বর্তমানে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। এমনকি দুই কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতও করেছেন আলাউদ্দিন।
কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।অভিভাবকেরা জানান, আলাউদ্দিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদ আচরণ করেন।
তাদের প্রশ্ন, তিনি তো কোনো সহকারী প্রধান শিক্ষকও নন। তিনি কেবল একজন সিনিয়র শিক্ষক। তাহলে তার মতো অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত একজনকে কীভাবে একটি স্বনামধন্য বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলো?এসব অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এই প্রতিবেদককে বিদ্যালয়ে গিয়ে সরাসরি কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। অথচ পরীক্ষার ফি বাড়ানো কিংবা অনিয়মের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’