এশিয়া কাপের ১৭তম আসর থেকে কার্যত ছিটকেই গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ে টিকে থাকতো লঙ্কানদের ফাইনালে উঠার স্বপ্ন। কিন্তু শেষমেষ তেমন কিছুই হয়নি। উল্টো, ম্যান ইন ব্লুদের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এতে সুপার ফোরের প্রথম দল হিসেবে বিদায় নিলো লঙ্কানরা। তবে বাংলাদেশ এখনো টুর্নামেন্টে টিকে আছে। বৃহস্পতিবার ‘অলিখিত’ সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারালেই মিলবে ফাইনালের টিকিট। পাকিস্তানের সামনেও একই সমীকরণ। অন্যদিকে প্রথম দল হিসেবে এবারের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের ফাইনালে উঠল ভারত।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। জবাবে ভারতের স্পিন তোপে পড়ে ১২৭ রানে অলআউট হয়েছে টাইগাররা। এতে ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতেই ৪১ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায় তারা।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ তামিম (১) দ্বিতীয় ওভারে আউট হন। এরপর পারভেজ ইমন ও সাইফ হাসান ৪২ রানের একটি জুটি গড়েন, যা ছিল ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি। কিন্তু ইমন ১৯ বলে ২১ রান করে আউট হন। এরপর পরপরই ব্যাটিংয়ে নামা তাওহীদ হৃদয় (৭), শামীম হোসেন (০), জাকের আলী (৪), রিশাদ (২) কেউই দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি।
একমাত্র সাইফ হাসান, যিনি একপ্রান্তে লড়াই করে ৫১ বলে ৬৯ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল ৩ চার ও ৫ ছক্কা। সাইফের অসাধারণ লড়াইয়ের পরও বাংলাদেশ মাত্র ১২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়।মূলত, বল হাতে বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দেন দুই লেগ স্পিনার কুলদীপ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তী।
কুলদীপ ৪ ওভারে ১৮ রান খরচা করে ৩টি উইকেট নেন, আর বরুণ ২৯ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন। এছাড়া বুমরাহও সমান ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ১ উইকেট শিকার করেন।এর আগে, ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে নতুন বলে দারুণ শুরু করেছিলেন তানজিম সাকিব।
প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন। পরের ওভারে নাসুম আহমেদও ভালো বোলিং করেন। এছাড়া তৃতীয় ওভারেই উইকেটের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সাকিব। কিন্তু উইকেটের পেছনে ক্যাচ ফেলে দেন জাকের। সেখান থেকেই শুরু হয় ভারতীয় দুই ওপেনারের ঝড়।অবশ্য, পাওয়ার প্লে’র পরের ওভারেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। এসেই ব্রেকথ্রু এনে দেন রিশাদ।
এই লেগ-স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে তানজিম সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শুভমান গিল। সাজঘরে ফেরার আগে গিল ১৯ বলে ২৯ রান করেন।এরপর নবম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান শিভাম দুবেকে। গুগলি বুঝতে না পেরে তুলে মারতে যান দুবে, সহজ ক্যাচ নেন লং অফে থাকা তাওহীদ হৃদয়। ২ রানের বেশি করতে পারেননি টপ-অর্ডার এই ব্যাটার।
এরপর ইনিংসের ১২তম ওভারে বড় ধাক্কা খায় ভারত, ওভারের শুরু ও শেষ দুই বলেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় ম্যান ইন ব্লু’রা। ওভারের প্রথম বলেই রানআউট হয়ে ফেরেন আগ্রাসী ইনিংস খেলা অভিষেক শর্মা।
এতেও অবশ্য রিশাদের নাম জুড়ে দেওয়া যায়। মোস্তাফিজের বল থার্ড ম্যানের অঞ্চলের দিকে খেলেছিলেন। দারুণ ফিল্ডিংয়ে নন স্ট্র্রাইকে দেন রিশাদ। মোস্তাফিজও ভুল করেননি। রানআউটে অভিষেকের বিদায়ঘণ্টা বাজার আগে ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৭ বল খেলে ৭৫ রান করেন তিনি।আর ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজুর রহমানের শর্ট ডেলিভারিতে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টা করেন সূর্যকুমার। তবে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক জাকেরের গ্লাভসে জমা পড়ে বল। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও, রিভিউ নেন আত্মবিশ্বাসী জাকের।
রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায়, বল ব্যাট ছুঁয়ে গেছে। সিদ্ধান্ত বদলান আম্পায়ার। ১১ বলে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন ভারত অধিনায়ক।ইনিংসের ১৩তম ওভারে ফের আক্রমণে এসেছিলেন রিশাদ হোসেন, তবে এই ওভারে সাফল্য পাননি। উল্টো, ওভারের শেষ বলটি লং অফ দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা হাঁকান হার্দিক পান্ডিয়া।
পরের ওভারে আঘাত হানেন তানজিম সাকিব। তার বলে ফেরেন তিলক ভার্মা, প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৭ বলে মাত্র ৫ রান করেন তিনি। এতে ৫২ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে বড় ধরণের বিপাকে পড়ে যায় দলটি।
সেখান থেকে অক্ষর প্যাটলকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় বিপর্যয় কাটিয়ে স্কোরশিট সচল রাখেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার দায়িত্বশীল ইনিংসের চ্যালেঞ্জিং পুঁজিও পায় ম্যান ইন ব্লু’রা। তবে, ইনিংসের শেষ বলে তাকে ফেরান সাইফউদ্দিন। ফেরার আগে ২৯ বলে ৩৮ রান করেন হার্দিক। অন্যপ্রান্তে ১৫ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন অক্ষর।