আওয়ামী লীগের সময়ে এসআলম গ্রুপের হস্তক্ষেপে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ হওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির কর্মকর্তাদের জন্য সেই বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বর এ ফল প্রকাশিত হয়। এদিনই প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির কর্মকর্তাদের জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার ফলাফল ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) কর্তৃক গৃহীত এ পরীক্ষায় ৮৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুত্তীর্ণ ১২ শতাংশ পরীক্ষার্থীর জন্য সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে চাকরিবিধি ভঙ্গ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জন কর্মীকে ওএসডি করা হয়েছে। ওএসডি হওয়া কর্মীরা বেতন-ভাতা ঠিকই পাবেন, তবে কোনো দায়িত্ব বা কর্মস্থলে থাকবেন না।
ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন থেকেই হাজারো কর্মীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি সিভি নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগের বেশিরভাগ হয়েছিল চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে থেকে। ফলে বর্তমানে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক কর্মীই ওই অঞ্চলের।
ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা ড. কামাল উদ্দীন জসীম গণমাধ্যমকে সম্প্রতি বলেন, নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ না করে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন কর্মীদের জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর মাধ্যমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। অনেকেই সেই পরীক্ষায় অংশ নেননি। যারা অংশ নেয়নি তাদের ওএসডি করা হয়েছে। আর চাকরি বিধি লঙ্ঘন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় লেখালেখি করেছে এমন কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মীর অনেকের একাডেমিক সনদ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সবার সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলে বিজিসি ট্রাস্ট ও পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। জাল সনদের কারণে এরই মধ্যে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশনায় গত
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হলেও মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। তারা নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা পরীক্ষায় অংশ নেননি, সেই ৪ হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়েছে। আর যারা পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। এতে ব্যাংকটি গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই অযোগ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাছাই করতে এবং ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতে বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।