কাতারভিত্তিক এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট অনুপ্রবেশ করিয়ে অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভাঙার পরিকল্পনা চলছে—এ ধরনের গোপন চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী এক দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু সংগঠিত দল জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, নকল টাকার কাঁচামাল এবং টাঁকশালে ব্যবহৃত মেশিন-উপকরণ একই অঞ্চলে তৈরি হয়ে চোরাপথে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে এবং সেখানে তৈরি কাগজ বাংলাদেশি নোটের কাগজের অনুরূপ হওয়ায় সন্দেহ বাড়ছে। অনুসন্ধানে অভিযোগ করা হয়েছে, টাঁকশালে আগে নিযুক্ত থাকা ডিজাইনার ও কারিগররা—কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অনুগত কর্মীরা—গোপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জাল নোট ছাপাচ্ছেন এবং সেটি ধীরে ধীরে দেশে ঢুকিয়ে বেচাকেনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ে তৎপর হয়েছে বলে খবর অনুযায়ী জানা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার জাল নোটের অভিযোগ সত্য হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের; তবে ব্যাংকের কাজের সীমাবদ্ধতা আছে—এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত কাজ করতে হবে এবং সাধারণ জনগণকে ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, “বর্তমানে পুরোনো টাকা বাজারে ছাড়া হচ্ছে না; বাজারে শুধু নতুন টাকা দেওয়া হচ্ছে।”
রিপোর্টে আরও ফুটে ওঠা অভিযোগ অনুযায়ী, জাল নোট বিক্রির জন্য বিভিন্ন সিক্রেট গ্রুপ ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে; সেখানে ১ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রির দাম ১০–১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে দেখা গেছে এবং বিক্রেতারা ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’ বা ‘এ গ্রেড’ রেপ্লিকা-পণ্যের মতো প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্রেতার আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করছে। একটি গ্রুপে পোস্ট করা একটি ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে ক্রেতাকে সরবরাহের অগ্রিম দাবি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জাল নোট পাঠানোর কথাও বলা হয়—এসব তথ্য অনুসন্ধানকারীরা তুলে ধরেছেন।
এক নাম না প্রকাশ করা কর্মকর্তা সংবাদে বলেছেন, টাঁকশালে দীর্ঘবছর নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা–কর্মচারী রাজনৈতিকভাবে নির্দিষ্ট দলের অনুগত হওয়ায় এবং কিছু মেশিনারিজ পররাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছে বলে কাজটি রাষ্ট্রীয়ভাবে করা হলে তা ঠেকানো কঠিন হত। তিনি বলেছেন, টাকার ডিজাইনার ও কারিগর যারা পরবর্তী সময়ে অবসরে গেলেও তাদের ওপর নজর রাখা যেতে পারে।
এই প্রতারণা চক্র সম্পর্কে প্রকাশিত অনুসন্ধানের পর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্তে নিয়োজিত আছে বলে সূত্র জানিয়েছে; সরকারী দিক থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বাছাইকৃত মন্তব্য বা রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি।