ইলিয়াস হোসাইন
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার আটটি মাদ্রাসার এতিমদের বরাদ্দকৃত টাকা সুপরিকল্পিত ভাবে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠান গুলোর পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে চলতি জানুয়ারি-জুন মাস পর্যন্ত ৮টি এতিমখানায় ১৪০ জন এতিমের নামে ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এতিমখানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর যৌথ স্বাক্ষরে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করেছে। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ প্রত্যেক এতিম মাথা পিছু মাসিক বরাদ্দকৃত ২ হাজার টাকা হতে খাদ্য বাবদ ১৬০০টাকা, পোষাক বাবদ ২০০ টাকা, ঔষধ ও অন্যান্য ২০০ টাকা ব্যয় করার শর্ত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি কোন নিয়ম নীতি মানছেন না ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
সরজমিনে উপজেলার চৈতা নেছারিয়া শিশু সনদ,মানসুরা এতিমখানা, রামপুর সিদ্দিকিয়া শিশু সনদ, কলাগাছিয়া ছালেহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, ঘটকের আন্দুয়া এতিমখানায় গেলে এতিমের সংখ্যা কম পাওয়া যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করছে সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন, এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানা গুলোতে। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের আশু হস্থক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান গুলোতে পিতা-মাতা থাকাও এতিমের তালিকা দেখিয়ে বিভিন্ন এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা এতিমের বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত এতিমরা সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রামপুর সিদ্দিকিয়া শিশু সনদ এর সভাপতি অধ্যক্ষ এম.এফ নুরুল হক জানান, আমাদের এতিম খানায় ২০/২৫ জন এতিম আছে সবাইকে আমরা ভরণ পোষণ দেই। আপনার যা লেখার আপনি লিখে দেন।
কলাগাছিয়া সালেহিয়া এতিমখানার সভাপতির কাছে সুবিধাভোগী এতিমদের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ উক্ত মাদ্রাসা থেকে ৮ জন এতিম সুবিধা পাচ্ছে। সরজমিনে ৩ জন এতিম উপস্থিত পাওয়া যায়। তবে তাদের পিতা-মাতা জীবিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা,মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, এ অর্থের বরাদ্দ ব্যাপারে আমি কিছ্ইু জানি না। চলতি বছরে প্রতিটি মাদ্রাসা পরিদর্শন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিষয় টি ইতোমধ্যে আমার গোচরীভূত হয়েছে। এতিম নেই অথচ এতিমদের নামে বরাদ্দ নেওয়া হচ্ছে, যা নৈতিকতা বর্জিত ও সরকারি অর্থের অপচয়।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা দপ্তরকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে অভিযোগকৃত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।