মাদারীপুর প্রতিনিধি।।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালী যাবার সময় ভূমধ্যসাগরে প্রচন্ড ঠান্ডায় মারা যাওয়া ইমরান হাওলাদারের মরদেহ গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামে শনিবার দুপুরে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ইমরানসহ মাদারীপুরের ৫ যুবক মারা যাবার ২১ দিনেও কোন মামলাই হয়নি। ফলে ধরাছেঁায়ার বাইরে দালালচক্র। এতে ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের ধরতে অব্যাহত রয়েছে অভিযান।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ভাগের্যর চাকা পরিবর্তন করতে গিয়ে একমাত্র ছেলে ইমরান হাওলাদার লাশ হয়ে ফিরবে এ শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা জামিলা বেগম। আজাহারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। শনিবার সকালে হযরত শাহজাহাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ইমরানের মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। পরে মরদেহ একনজর দেখতে ভীড় করেন পাড়াপ্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় ইমরানকে। সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন ঘনিষ্ঠজনেরা।
স্বজনরা জানায়, ধারদেনা করে মাদারীপুরের দক্ষিণপাড়া গ্রামের সলেমান বেপারীর ছেলে মানবপাচারচক্রের সক্রিয় সদস্য সামাদ বেপারীর হাতে ৮ লাখ টাকা তুলে দেন নিহত ইমরানের ভ্যানচালক বাবা শাজাহান হাওলাদার। পরে আর কোন খেঁাজই রাখেনি দালালচক্র। এই ঘটনায় দালালদের কঠোর বিচার দাবী করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ইমরানের চাচা মো. শওকত হাওলাদার বলেন, এলাকার অল্পবয়সী ছেলেদের প্রলোভন দেখিয়ে ইতালী নেয়ার কথা বলে দালালচক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর খবর আসছে। দালালদের বিচার না হওয়ায় এই অপরাধ থামছেই না। আমরা দালালদের কঠোর বিচার চাই।
ইমরানের ফুফু শিউলি বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের একমাত্র ছেলে ইমরানকে দালালচক্র মেরে ফেলেছে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, গত ২২ জানুয়ারি অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া হয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালী যাবার পথে প্রচন্ড ঠান্ডায় মারা যায় ৭ বাংলাদেশী। মারা যাওয়া ৭ বাংলাদেশীর মধ্যে ৫ জনই মাদারীপুরের বাসিন্দা। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে দালালচক্রকে ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, একটি লাশ দেশে আসছে কিন্ত তার পরিবার আমাদের কিছু জানায়নি। আমরা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া সরকার সবসময় অসহায়দের পাশে ছিল এখনও থাকবে।
উল্লেখ্য, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেনসহ অন্য নিহতরা হলেন মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালাল এর ছেলে জহিরুল, ইশিবপুর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত, পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন। বাপ্পীর বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলায়। নিহতের পরিবাররা এখন লাশের অপেক্ষায় আছেন।