।। লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল।।
ষাটোর্ধ সবার পেনশনের ব্যাবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ । এই খবরটি দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কোটি কোটি সালাম। সারা দেশের সকল গনমাধ্যম প্রিন্ট মিডিয়া,ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সকল চ্যানেলে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারী খবরটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথেই সারা দেশে ধন্য ধন্য পড়ে যায় । প্রধানমন্ত্রীর নির্দের্শিত এই খবরটিকে সকলেই সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বিশেষ করে আমরা যশোরের বাঘারপাড়ার গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত এলাকার ৬৪ টি কৃষি ক্লাবের হাজার হাজার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশী আনন্দিত ও গর্বিত হয়েছি। কারন এই দাবীটা নিয়েই আমরা প্রতিটি গ্রামের কৃষি ক্লাবের কৃষক নেতা বা কৃষক সংগঠকদের নিয়েই আন্দোলন করে যাচ্ছিলাম।
আমাদের দাবীটা ছিল “ বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর এ দেশের সিংহ ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। দেশের শতভাগ মানুষ কৃষকের উপর নির্ভরশীল। যে দেশের কৃষকেরা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে মাঠে ফসল ফলায়ে মানুষের মুখের অন্ন জোগায়, সে দেশের কৃষকেরা পায় না কোন মর্যাদা, উৎপাদিত ফসলেরও কোন ন্যায্য মুল্য দেয়া হয় না। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এই কৃষকের উপর ভর দিয়েই উচ্চ পর্যায়ের যাবতীয় যা কিছু সম্পাদন হয়ে থাকে। দেশে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, যেকোন চাকরী শেষে তাদের পেনশন ভাতা, এমনকি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১৯৭১ সালে জীবন বাঁজি রেখে যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরও ভাতা চালু হয়েছে।
অথচ কৃষকের নামে কোন ভাতা চালু নেই। হয়তো অনেকে বলবেন যে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতা তো কৃষকের মধ্যেই পেয়ে থাকে। কিন্তু না আমরা বলছি কৃষক পেনশন ভাতা চালু করতে। কারন ষাটোর্ধ বয়সী যেসব কৃষক তারা না পারে কোন চাষ কাজ করতে, না পারে অন্য কিছু করে জীবন রক্ষা করতে। তাই তাদের বেঁচে থাকতে একটা অবলম্বন দরকার। সমস্ত দিক বিবেচনাপুর্বক গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের সবিনয় নিবেদন- এ দেশের কৃষকের পেনশন ভাতা চালু করা হোক।
এই দাবি টা উঠে এসেছে সম্প্রতি কৃষক প্রতিনিধিদের এক গোলটেবিল বৈঠক থেকে। সেই কৃষক প্রতিনিধিদের গোলটেবিল বৈঠকের স্থানের পরিচয় একটু বিষদভাবেই দিতে হয়। কারন সারা বাংলাদেশের একটা বৃহৎ কৃষক সংগঠন যার নাম গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইদঘাট গ্রামে অবস্থিত অত্র অঞ্চলের ৬২ টি গ্রামের ৬৪ টি কৃষি ক্লাবের নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র। কেন্দ্রটি ২০০১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট(বারি) এর তৎকালীন মহাপরিচাক ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক উদ্বোধন করেছিলেন। সারা বাংলাদেশের একটা বৃহৎ কৃষক সংগঠন,যার অভুতপুর্ব অবদান সারা দেশের কৃষক,কৃষিবিদ ও কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগন একবাক্যে স্বীকার করে থাকেন। এই কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রটি অত্র অঞ্চলের ৬৪টি কৃষিক্লাবের নিয়ন্ত্রনের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসাবে কাজ করে থাকে। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে যশোরের গাইদঘাট গ্রামে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ শুরু হয়। যে কারনে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসাবে যশোর জেলা সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পায়।
বৃহত্তর যশোর অঞ্চল সারা দেশের মধ্যে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেল এলাকা হিসাবে সারা বিশ্বের মধ্যে স্থান পাওয়াই এই কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন ও তার সহযোগী বন্ধু (সাংবাদিক লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল)কে ২০১০ সালে ঢাকার ফার্মগেটে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস মিলনায়তনে তখনকার কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পুরস্কৃত করেছিলেন। কৃষক সংগঠক সেই আইয়ূব হোসেনের জীবোদ্দশায় এই কেন্দ্রের উদ্যোগে তখন এ এলাকায় দেশের সকল স্বনামধন্য কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষিবিদ ও অগনিত বিদেশী বিজ্ঞানীদের পদচারনা ঘটেছিল। সেই বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের মডেলকে সামনে নিয়েই এখন সারা দেশেই চলছে বিষ মুক্ত সবজি উৎপাদনের আন্দোলন।
এই গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রে বিগত ২০২১এর ১০ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে সকল কৃষিক্লাবের কৃষক প্রতিনিধিদের নিয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন হয়েছিল। বৈঠকে অনেক কিছু আলোচনার মধ্যে এ দেশের কৃষকের পেনশন ভাতা চালু করা হোক দাবিটা প্রাধান্য পেয়েছিল।“ এ রিপোর্টটি তখন অন্তত ১০ টি জাতীয় পত্রিকায় উপসম্পাদকীয় পাতায় ছাপা হয়েছিল। গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্রের একটি কৃষি ক্লাব বড় খুদড়া গ্রামে‘র মাধ্যমিক হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত একসময় শাইখ সিরাজের “কৃষকের বাজেট ভাবনা“ অনুষ্ঠান ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে এই দাবীটা সেই সময় জীবোদ্দশায় আমাদের সেই কৃষক সংগঠক আইয়ূব হোসেন উত্থাপন করেছিলেন। ঐ অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
যাহোক গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সকল সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশবাসি জানতে পারে “দেশের ষাটোর্ধŸ সব নাগরিকের জন্য পেনশন ব্যাবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে একটি আইন প্রনয়নের উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অর্থ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান মন্ত্রী। গতকাল(১৬ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার গনভবনে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর তালুকদার“সর্বজনীন পেনশন ব্যাবস্থা“ বিষয়ে প্রনীত কৌশলপত্রের উপর উপস্থাপনার সময় তিনি এ নির্দেশ দেন। প্রধান মন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আওয়ামীলীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারী বেসরকারীসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ জনগনের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উল্লেখ ছিল। অর্থ বিভাগের একটি সুত্রে জানা গেছে, পেনশন স্কিমটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে থাকবে বলে জানা গেছে। সংবিধান অনুযায়ী ২৪ সালের জানুয়ারী মাসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতা,বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও অর্থনৈতিক সক্ষমতার আলোকে প্রনীত কৌশলপত্রের উপর বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল,পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস,প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীসহ অন্যান্য উধ র্¦তন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
খবরে বলা হয়েছে আওয়ামীলীগের গত নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারী বেসরকারীসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতের ষাটোর্ধ জনগনের জন্য একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উল্লেখ ছিল।“ মোদ্দাকথা আমরা সারাদেশের জনগন চাইবো পেনশন স্কীমটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে অর্š‘ভুক্ত করা হোক। নইলে যেখানে দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতিতে সারা দেশের জনগনের নাভিশ্বাস চলছে,সেখানে বিষয়টির কালবিলম্ব হলেই নির্বাচনী মুলা ঝুলানো অর্থবাচক হবে। তাতে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শিত এ খবরটির অবমুল্যায়ন করা হবে এবং জনগনও তা মেনে নেবে না। তাই শুভ কাজ শীঘ্রংগতি,অশুভ কাজ কাল বিলম্ব।
লক্ষ্মণ চন্দ্র মন্ডল ( লেখকঃ সাংবাদিক ও সংগঠক)
০১৭১২১৬৮১৪৭, ২৩/০২/২২ই্ং
ই-মেইল-laxmanaicc@gmail.com