— মাও. মো. আনোয়ারুল ইসলাম
আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ও মাতা হাওয়া (আ.) ব্যতিত সকল মানুষ পিতা মাতার মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে। ব্যতিক্রম শুধু হযরত ঈসা (আ.) তিনি আল্লাহর বিশেষ কুদরতে পিতা ছাড়া পৃথিবীতে এসেছেন। আমরা সকল মানুষ পিতামাতার কাছে আজীবন ঋণি। তাদের এ ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে জান্নাত নামক চির শান্তির নীড়ে পা রাখা কোন অবস্থাতেই সম্ভব হবে না।
রাসুল (স.) এ প্রসংঙ্গে বলেন, তাঁরা দুজন তোমাদের জান্নাত ও জাহান্নাম ( মেশকাত, ৪৭২৪ )। রাসুল (স.) পিতার ব্যাপারে বলেন, পিতা হলেন বেহেস্তের মধ্যবর্তী দরজা । যদি তুমি ভাল মনে কর তবে এ দরজা রক্ষণাবেক্ষণ কর, আর যদি ইচ্ছে কর , তবে বিনষ্ট কর (মেশকাত, ৪৭১১)।
অনুরূুপভাবে মায়ের ব্যাপারে রাসূল (স.) বলেন, মায়ের সেবাকেই অবলম্বন কর। কেননা বেহেস্ত তাঁর পায়ের কাছে ( মেশকাত, ৪৭২২)। পিতামাতার মর্যাদা ও তাদের উপর সন্তানের করণিয় সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন, তোমার রব আদেশ করেছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো ইবদাত করোনা এবং তোমরা (তোমাদের ) পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যব্যবহার করো, তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয,তাহলে তাদের (সাথে) “উহ” শব্দটিও বলোনা এবং কখনো তাদের ধমক দিওনা, তাদের সাথে সম্মান জনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো। অনুকম্পায় তুমি ওদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো, তুমি বলো, হে (আমার) রব,ওদের উপর (ঠিক সেভাবেই) তুমি দয়া করো,যেমনি করে শৈশবে ওরা আমাকে ( দয়া করে ) লালন পালন করেছে ( সুরা বানী ঈসরাইল ২৩২৪)। এ আয়াতদ্বয় হতে বুঝা যায় আল্লাহ নিজেই পিতা-মাতাকে তাঁর পরই স্থান দিয়েছেন এবং তাদের সাথে সন্তানের আচরণ কেমন হবে সেটা ও আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন । এ ছাড়া পিতা মাতার খেদমতের ত্রুটি হলে সন্তান দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিণ শাস্তির মুখোমুখি হবে।
এ সর্ম্পকে রাসূল (স.) বলেন, প্রত্যেক পাপ আল্লাহ তা’আলা যতটুকু ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন, কিন্তু পিতামাতার অবাধ্যতা ক্ষমা করেন না, বরং আল্লাহ তা‘আলা এটার শাস্তি দুনিয়াতেই তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে প্রদান করেন (মেশকাত ৪৭২৮)। এমনি ভাবে কুরাআন হাদিসে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে যে, পিতা মাতার আনুগত্য ও খিদমতের ত্রুটি হলে সন্তান জাহান্নামি হবে। আর পিতামাতার খিদমত যথাযথ হলে সন্তান জান্নাতি হবে। পিতামাতার খিদমতের মধ্যেই আমাদের দুনিয়ায় শান্তি ও পরকালে মুক্তির পথ নিহিত রয়েছে।
রাসূল (স.), বলেন,যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় ভোর করল যে, সে তার মাতা-পিতার ব্যপ্যারে আল্লাহ তা’আলার আদেশের অনুগত রয়েছে,তখন তা সেই ভোর এমন অবস্থায় হয়, যেন তার জন্য বেহেস্তের দুটো দরজা খোলা থাকে। যদি একজন হয়, তখন বেহেস্তের একটি দরজা খোলা থাকে। আর যে ব্যক্তি মাতাপিতার ব্যাপারে আল্লাহ তায়লার কাছে অপরাধি হিসেবে ভোর করে, তবে সে যেন এমন ভাবে ভোর করল যে, দোজখের দুটো দরজা তার জন্য খোলা থাকে আর যদি তাঁদের একজন থাকে, তবে একটি দরজা খোলা থাকে।
এ সময এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, যদি তাঁরা পুত্রের প্রতি অবিচার করে ? জবাবে রাসূল (স.) বলেন যদিও তাঁরা পুত্রের প্রতি অবিচার করে, যদি ও তাঁরা পুত্রের প্রতি অবিচার করে, যদিও তারা পুরে প্রতি অবিচার করে ( মেশকাত ৪৭২৬)। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সহজ সরল এ বর্ণনা ভুলে আমরা অনেকই দুনিয়ায় শান্তির জন্য বিভিন্নি নেতানেত্রীর এবং পরকালে মুক্তির জন্য পীর, মাশায়েখদের খিদমত নিয়ে ব্যস্ত। আসুন এ ভুল পথ ছেড়ে জান্নাতের সিঁড়ি পিতামাতার খিদমাত করে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করি।আল্লাহ তা’আলা আমাদের তাওফিক দান করুন । আমিন।