1. bdtelegraph24@gmail.com : Bdtelegraph Bangla :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. islam.azizul93@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
৭ মার্চ : গণমুক্তির ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

৭ মার্চ : গণমুক্তির ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

  • সর্বশেষ আপডেট : মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০২৩
  • ২১০ জন খবরটি পড়েছেন
৭ মার্চ : গণমুক্তির ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বিলাল হোসেন মাহিনী

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও লাখো প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির আনন্দ ও বেদনার এক সংমিশ্রিত ইতিহাস। সেই ইতিহাসের ইতিহাস হয়েছে বঙ্গবন্ধুর গণমুক্তির ঐতিহাসিক ভাষণ। মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অধ্যায় এবং স্বাধীনতা শ্রেষ্ঠ অর্জন।

১৯৭১’র ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ মহান স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা। কিন্তু সেই ভাষণ ও তৎপরবর্তী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি কতটুকু? গণমুক্তির ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ছিল, একটি শোষণ-বৈষম্যহীন গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ। প্রত্যাশা ছিল, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে শোষণমুক্ত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা। মুক্তচিন্তা-চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকারসমূহ নিশ্চিত করা। বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু পেরেছি কি? বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও তাঁর নেতৃত্বে যে বাংলাদেশ স্থাপিত হয়েছিল, তার প্রত্যাশা কী এমন হওয়ার কথা ছিল? আজ যখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে, তখন বাঙালি হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হয়।

বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও জাতির রক্তিম সূর্যাভা। একটি লাল-সবুজের পতাকা। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক গণমুক্তির ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এটি সত্যিই বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের। ইউনেস্কোর ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ তালিকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে স্থান দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো একটি ভাষণ জাতির ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে, হয়ে উঠতে পারে আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক। আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষণ বা বক্তৃতার কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন কারণে এসব ভাষণের কোনো কোনোটি আবার ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ছিল আলোকবর্তিকার মতো, যা ক্রান্তিকালে মানুষকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ।

ভাষণের প্রেক্ষাপট : একাত্তরের ৭ মার্চ। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা, ৩ মার্চে নির্ধারিত সংসদ অধিবেশন ভেঙে দেওয়া, দেশব্যাপী চলমান অসহযোগ আন্দোলন ও হরতাল, জনগণের প্রত্যাশার চাপ, সব মিলিয়ে জীবনের এক কঠিন দিন পার করছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ৭ মার্চে তৎকালীন রেসকোর্স মাঠে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আয়োজন করা হয় বিশাল জনসমাবেশ। ওই দিন দুপুরে ভাত খেয়ে বিছানায় গেলেন একটু বিশ্রামের জন্য। প্রিয়তমা স্ত্রী পাশে বসলেন পানের বাটা নিয়ে।
সহজ-সরল এই গৃহবধূ নিজ স্বার্থ আর সন্তানের মায়া ত্যাগ করলেন দেশের মায়ায়। বঙ্গবন্ধুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কাউকে ভয় করবে না। দেশের মানুষ তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। তোমার যা বলা উচিত তাই বলবে, নিঃসংকোচে বলবে, নির্ভয়ে বলবে। সঞ্জীবনী সুধার মতো কাজ করল প্রিয়তমা স্ত্রীর এই অনুপ্রেরণা। বেরিয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধু। রেসকোর্স ময়দান তখন লাখো মানুষের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। চারদিকে গগনবিদারী স্লোগান। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর হাতাকাটা কালো কোট পরে বাঙালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু সেদিন দৃপ্তপায়ে উঠে আসেন রেসকোর্সের মঞ্চে৷ আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আবদুর রাজ্জাকের বর্ণনায় স্লোগান মুখরিত মঞ্চে বঙ্গবন্ধু সামনে এগিয়ে গেলেন এবং বললেন, ‘মাইকটা দে’। তারপর শুরু করলেন তার কিংবদন্তিতুল্য ভাষণ।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিন্তানের রাজধানী ঢাকা সেদিন ছিল মিছিলের শহর৷ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে মানুষ পায়ে হেঁটে, বাস-লঞ্চে কিংবা ট্রেনে চেপে রেসকোর্স ময়দানে সমবেত হয়েছিলেন৷ সবার হাতে ছিল বাংলার মানচিত্র আঁকা লাল সূর্যের অসংখ্য পতাকা৷
বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক এ ভাষণে তুলে ধরেন তার দুঃখভরা হৃদয়ের কথা। কারণ, তখন শহরের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত আর আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছিল স্বাধীনতা, বেঁচে থাকা আর অধিকার আদায়ের কান্না-ক্ষোভ। তিনি ভাষণে একে একে বর্ণনা করেন প্রথম থেকে তার নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রস্তাব, যাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। বায়ান্ন থেকে একে একে প্রায় প্রতিটি বছর যে রক্তপাত ঘটিয়েছে পাকিস্তানিরা, তারও বর্ণনা দিলেন তিনি। এই বর্ণনা থেকে বাদ যায়নি ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর ষড়যন্ত্রের কথাও। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, জনগণের অধিকারই তার কাম্য। এই অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধু সর্বাত্মক হরতাল ও সর্বগ্রাহী আন্দোলনের ডাক দেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। তার অবর্তমানেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর সবশেষে তার অগ্নিঝরা কণ্ঠে ফুটে ওঠে স্বাধীনতার ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

তবে, এক দিনের ঘোষণায় স্বাধীনতা আসেনি৷ তিল তিল করে বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটা জীবন দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি করেন৷ বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ওই ভাষণ দিয়েছিলেন৷ একদিকে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, অন্যদিকে তাকে যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিহিত করা না হয়, সেদিকেও তাঁর সতর্ক দৃষ্টি রাখেন৷ তিনি পাকিস্তান ভাঙার দায়িত্ব নেননি৷ তার এই সতর্ক কৌশলের কারণেই ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই জনসভার ওপর হামলা করার প্রস্তুতি নিলেও তা করতে পারেনি৷ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও শেখ মুজিবকে ‘চতুর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়৷ প্রতিবেদনে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শেখ মুজিব কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলো, কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলাম না৷

ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : ইউনেস্কো তাদের ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ (এমওডব্লিউ) কর্মসূচির উপদেষ্টা কমিটি ৭ মার্চের ভাষণসহ মোট ৭৮টি দলিলকে ‘মেমোরি অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এরমধ্য দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ-এ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৭সালের ৩০শে অক্টোবর সোমবার ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ইউনেস্কোর এ ঘোষণায় বিশ্ব এখন আরও বেশি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে।

প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক নিপিড়ন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া, যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে। সমাজে সমাজ-বিরোধী ব্যক্তির যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সমাজে সততা আজ লাঞ্চিত এবং অসহায়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করে তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, লক্ষ্য চেতনা সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকলকে সক্রিয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রনয়ণ ও তাদের রাষ্টীয় সম্মান দিতে হবে। নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করে, নারী ও পুরুষের সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। দুর্নীতির শিকড় উফড়ে ফেলতে হবে।

গণমুক্তির ঐতিহাসিক ভাষণ আমাদের শিখিয়েছে- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সম্পর্কিত যাবতীয় ব্যবস্থা ও সুযোগকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সকলের কাছে সহজলভ্য করতে হবে। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার সমূহ নিশ্চিত করতে হবে। বাঙালির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রের দেওয়া অধিকার ভোগ করার পাশাপাশি নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সততার সাথে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা পূর্ণতা লাভ করবে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews