।। লক্ষণ চন্দ্র মন্ডল।। নিজ গ্রামে আমরা উচ্চ শিক্ষিত বলতে যা বুঝি সে বিবেচনায় এখনও গ্রামে যে
কয়জন ব্যক্তি উচ্চ শিক্ষিত আছেন তাদের মধ্যে সবার উপরেই আছেন ড.আসাদুজ্জামান খান। বর্তমান জীবদ্দশায় মাত্র একজনই আছেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী অর্থাৎ ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব।
ড.আসাদুজ্জামান খান যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর গ্রামের মোঃ আমজেদ আলী খানের
ছেলে। মাতা মিসেস সালেহা খানম, যিনি বিগত ২০১২ সালের ৯ থেকে ১১ মার্চ বাঘারপাড়ার খাজুরা এম এন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাইদঘাট কৃষি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন কেন্দ্র আয়োজিত “গ্রামীণ জীবনযাত্রা ও কৃষি প্রযুক্তি
তথ্য এবং বীজ মেলায়” গর্বিত মাতা হিসাবে সংবর্ধিত হন। এই অনুষ্ঠানে দেশের ৩০ জন গুনীজনের সম্মাননা প্রদান করা হয়। গুণীজনদের মধ্যে জীবদ্দশায় সম্মাননা প্রাপ্ত মিসেস সালেহা খানম ছিলেন অন্যতম। সেই গর্বিত মাতার ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে ড. আসাদুজ্জামান খান হচ্ছেন পঞ্চম।
১৯৬৫ সালের ১ জুন ড. আসাদুজ্জামান খানের জন্ম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া গ্রামের স্কুলেই। এসএসসি ও এইচএসসির পর ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে বাংলাতে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৮৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ২০০০ সালে এমফিল ডিগ্রি এবং ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষ করে ড. আসাদুজ্জামান খান ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭
পর্যন্ত প্রভাষক পদে চাকরি করেন। এরপর আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে (খন্ডকালীন) শিক্ষকতা করেন।
পেশাগত জীবনে ড. খান ১৯৯৭ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ‘দৈনিক মুক্তকন্ঠ’পত্রিকায় ‘ষ্টাফ রিপোর্টার’ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় একই পদে সাংবাদিকতা করেন। তারপর ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় শিক্ষা বিভাগে ‘ফিচার স¤পাদক’ হিসাবে ২০০১ সাল থেকে প্রায় এক দশক কর্মরত ছিলেন। এরপর ‘দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ’পত্রিকায় সিনিয়র সাব-এডিটর হিসাবে যোগদান করেন। এছাড়াও সহকারী সম্পাদক হিসাবে ‘দৈনিক প্রকৃতির সংবাদ’-এ এবং দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকায় ‘ফিচার সম্পাদক’ হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। বর্তমানে ‘দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা’য় সহযোগী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্বরত আছেন।
ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক হিসেবে ড. খান ”বাংলাদেশের কথা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলনের চেতনা” শীর্ষক পিএইচডি অভিসন্দর্ভ প্রণয়ন করেছেন। এর আগে “বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের রূপ ও শিল্পসাফল” শীর্ষক এম.ফিল. গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী পালনের জন্য ঘোষিত ২০২০-২১ (১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মুজিব বর্ষের প্রতিদিন ‘দৈনিক জবাবদিহি’ পত্রিকায় ধারাবাহিক ৮০০ থেকে ১০০০ শব্দের গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন লিখেন- যা ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ নামে পুস্তক
আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
উপন্যাস রচনায় তিনি কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রেখেছেন। উপন্যাসগুলো হচ্ছে ‘একাত্তরের যাত্রী’, ‘ডানপিটে মুক্তিযোদ্ধা এবং ‘সাদা ফুল মিস্টি বকুল’।
প্রকাশিতব্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবস’, ‘জাতির পিতা ও জাতির অবিস্মরণীয় দিন’ এবং ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’। এছাড়া ১০টির অধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী ও জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ড.আসাদুজ্জামান খানের দিকে লক্ষ্য করলে দৃশ্যমান হয় কঠোর শ্রমসাধ্য মানসিকতার বলয়ে সাহিত্য সাংবাদিকতা ও গবেষনামুলক লেখনীর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যে পৌছানোর প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে। তার সম্পাদিত গ্রন্থ বলতে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃৃক উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনির বাংলা সহপাঠ লাল সালু উপন্যাস সম্পাদনা। ২০১৬ সালে শিক্ষা সহায়ক মোট-১০টি গ্রন্থ সম্পাদনা।
জীবনের বহু প্রশিক্ষণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৮ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ঢাকায় আয়োজিত ‘“কম্পিউটার ট্রেনিং অন এমএস উইন্ডোজ, এমএস ওয়ার্ড এন্ড ইনটারনেট ফর জার্নালিস্টস এন্ড মিডিয়া র্পাসনেল“ বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ। এছাড়াও তিনি দুটি ফিচার ফিল্ম নির্মাতা।
ব্যক্তিগত জীবনে ড. আসাদুজ্জামান খান যশোরের অবসরপ্রাপ্ত জেলা নাজির মিঃ আব্দুল আলিম সাহেবের কন্যা ব্যাংক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর) এর সাথে ১৯৯৯ সালের ২২ জানুয়ারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের রয়েছে এক কন্যা, জাসিয়া আসাদ রূপন্তি যিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত।
সাংগঠনিক বিষয়াদির দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে তিনি বিভিন্ন সংগঠনের উল্লেখযোগ্য পদে থেকে নিষ্ঠার সাথে সে সব কাজ সম্পাদন করে প্রশংসার দাবীদার হয়েছেন।
সবশেষে ড. আসাদুজ্জামান খানের মধ্যে সব সময়ের জন্য উদ্ভাবনী ধারণা, জনসংযোগ ও গণ-যোগাযোগ, পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রত্যয় নির্ণীত। আমরা তার উত্তোরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।