শ্যামনগর প্রতিনিধি । বেশী বেতনে ভাল চাকরী পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের মধ্য বয়সী এক নারীকে সৌদি আরবে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পুলিশ মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল শ্যামনগর উপজেলার শংকরকাটি গ্রামের মোমিন খাঁর ছেলে।
সৌদি আরবে নির্যাতিত শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের ওই নারীর ভাই জানান, প্রায় তিন বছর পূর্বে বিয়ে হলেও ছয় মাস আগে তার বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরবর্তীতে বাবার বাড়িতে থাকার সুযোগে পূর্ব পরিচিত তাসলিমা খাতুন ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান তার বোনকে বেশী বেতনে সৌদি আরবে ভাল চাকুরির প্রলোভন দেয়। সে অনুযায়ি পাসপোর্ট তৈরি করে তার বোন গত ১৭ মার্চ ঢাকায় যায়। নির্যাতিত ওই নারীর ভাই অভিযোগ করে বলেন, সেভেন স্টার ম্যান পাওয়ার সার্ভিসেস এর মাধ্যমে ১৯ মার্চ ঢাকা হযরত শাহজালাল বমিানবন্দন ত্যাগের পর থেকে তার বোনের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। সৌদিতে ভাল আছে বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করেন তাসলিমা ও মোস্তাফিজুর। তবে আকস্মিকভাবে গত ১৬ এপ্রিল দুপুর পৌনে তিনটায় তার হোয়াটসএ্যাপে ‘ভয়েস কল’ পাঠিয়ে বোন নিজেকে বাঁচানোর আকুতি জানায়। এসময় কান্নাজাড়িত কন্ঠে সে জানায় সৌদিতে পৌঁছানোর পরই মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। শারীরিককভাবে অসুস্থ হওয়ায় প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে গেলেও সেগুলো ছিনিয়ে নেয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে না পেরে ক্রমেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে আটকে রেখে যৌনদাসী হিসেবে বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে গৃহস্থলীর ভারী কাজ করানো হলেও পারিশ্রমিকের অর্থ পাচার চক্রের সদস্যরা রেখে দেয়।
ভুক্তোভোগী বোনের বরাত দিয়ে তার ভাই আরও বলেন, কাজে যেতে রাজি না হলে কিংবা দেশে ফিরতে চাইলে তাকে মারপিট করার পাশাপাশি বাথরুমের পানি খেতে দেয়া হচ্ছে। ঠিকমত খেতে দেয়া হয় না দাবি করে তার বোন জানিয়েছে পেটে ক্ষুধা নিয়ে সে কাজ করতে না পারলে চরম অত্যাচার করা হয়। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে মারা যাওয়ার শংকার কথা জানিয়ে বোন জানিয়েছে যে, রাসেল আকন, তাসলিমা ও মোস্তাফিজুরসহ অপরিচিত দুই/তিন জন এই মানব পাচার চক্রের সাথে জড়িত। তারা মতিঝিলের সেভেন স্ট্যার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস নামীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে গ্রামের সহজ সরল, অভাবী এবং ডিভোর্সী নারীদের টার্গেট করে বলেও বোন তার ভাইকে জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে তাসলিমা বেগম বলেন, নির্যাতিত মেয়েটির দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে তিনি লাইসেন্স মালিক শিমুলের সাথে কথা বললে দুই লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে অন্য লাইসেন্স মালিককে দিয়ে তিনি বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা করছেন। ঢাকার সেভেন স্টার ম্যানপাওয়ার সার্ভিসের ম্যানেজার রাসেল আকন ওই নারীকে ফিরিয়ে আনার জন্য দুই লাখ টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেবলেন, সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় নির্যাতিতের ভাই মানব পাচারের অভিযোগে গত পহেলা মে চার জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিনজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।