ডেস্ক নিউজ।
দক্ষিণবঙ্গের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা যশোরের বাঘারপাড়ার নুরুল ইসলাম আর নেই( ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। রোববার বাদ যোহর বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় ।
পারিবারিকভাবে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে নুরুল ইসলাম ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। শনিবার দুপুরে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েন। এ সময় তাকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যান তিনি।
১৯৪৩ সালের ১৫ এপ্রিল যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার যাদবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। বকতিয়ার বিশ্বাস বক্ত ও জবেদা খানম দম্পত্তির চার পুত্র সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। নুরুল যশোর মুসলিম একাডেমি থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। তৎকালীন বাঘারপাড়ার জহুরপুর ইউনিয়নে সর্বপ্রথম ম্যাট্রিক পাস করে সাড়া ফেলেন তিনি। ১৯৫৮ সালে যশোর এমএম কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। বি.কম (ডিগ্রি) পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির পরই নুরুলের শিক্ষাজীবন স্থগিত হয়।
ছাত্রজীবনে নুরুল ইসলাম বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬২ সালে যশোরে এমএম কলেজের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) নির্বাচিত হয়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ওই সময়ে আইয়ুব খান সরকার বিরোধী আন্দোলনে যশোরে অগ্রভাবে থাকতেন তিনি। নুরুল তখন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ১৯৬৪ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর রাজনৈতিক দল ন্যাপে যোগ দেন। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ১৯৬৬ সালে যশোর জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এর পরপরই বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। ওই সময়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হেমন্ত সরকার, আব্দুল হক প্রমুখ নেতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয় তার।
১৯৭১ সালে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন নুরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সাল পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলার খাজুরা মনিন্দ্রনাথ মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেছেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী যশোরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।
নুরুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনে ন্যাপের কুঁড়েঘর প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে যশোরের সেক্রেটারি (সাধারণ সম্পাদক) টু গর্ভনর করেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ওই রাতেই নুরুল ইসলাম কে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে থাকাকালীন তার মেজ ছেলে মনিরুল ইসলাম তুহিন মারা গেলে প্যারোলে মুক্তি পান তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে নুরুল ইসলাম ও শামছুন্নাহার দম্পত্তির চার পুত্র ও এক কন্যা। বড় ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম। তিনি সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করেন। মেজ ছেলে প্রয়াত মনিরুল ইসলাম তুহিন। সেজ ছেলে শরিফুল ইসলাম লিলেন যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, তৃতীয় ছেলে মোজাহিদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ছোট ছেলে সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর স্কোডান লিডার পাইলট । নুরুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে ফাতেমাতুজ্জোহরা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে পিএইচডি করছেন তিনি। এছাড়া জন প্রশাসন মন্ত্রনাণয়ের উপ-সচিব সাজেদুর রহমান সবুজের চাচা ছিলেন মরহুম নুরুল ইসলাম।
এদিন জোহরের নামাজের পর যাদবপুর ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাষ্টীয় মর্যদায় একই স্থানে সন্মানীত করা হয়। মরহমের আত্বার মাগফিরাত কামনা করে ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে আসেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত।