সামসুল ইসলাম টুকু : অস্ট্রেলিয়ার পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে আকাশপথই সবচেয়ে জনপ্রিয় ,সস্তা , আরামদায়ক ও দ্রুততম ব্যবস্থা বলেই আমার মনে হয়। জানিনা অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন কি আছে। শুনলে বাংলাদেশের মানুষ অবাক হবেন যে অস্ট্রেলিয়ায় ৬১৩ বিমান বন্দর আছে। নিঃসন্দেহে সংখ্যাটি অনেক বড়। কারন বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৮ বিমান বন্দর। এরমধ্যে ৩টি আন্তর্জাতিক ও ৫ অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর। বাংলাদেশের অভ্যন্তিরিন রুটে বিমান ভাড়া তুলনামুলকভাবে বেশী তাই বিমানকে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে অষ্ট্রেলিয়া তা করতে সক্ষম হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার ৬১৩ বিমান বন্দরের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক, অভ্যন্তরীণ, সেনাবাহিনীর ও ব্যক্তিগত।
এর মধ্যে ১৭৫ টি বাণিজ্যিক বিমান বন্দর। এগুলি যেমন যাত্রী পরিবহণ করে তেমনি পণ্য পরিবহণ করে।তবে মূলত পন্য বহনকারীগুলিই বাণিজ্যিক বিমান। এগুলোকে অপারেটিং বিমান বা কার্গো বিমান বলা হয়। এসব বাণিজ্যিক বিমান আমেরিকান ইউনাইটেড, ডেল্টা, ফেডেক্স, ইউপিএস, এবং সাউথ ওয়েস্ট এয়ার লাইন্স পরিচালনা করে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার বিমান পৃথিবীর ২৩ টি দেশের ৩৪ টি আন্তর্জাতিক স্থান ও ৬১ টি দেশীয় স্থানে চলাচল করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে নিউইয়র্ক , লসএঞ্জেলস , সিঙ্গাপুর , লন্ডন , টোকিও , হংকং, নিউজিল্যান্ড অকল্যান্ড প্রভৃতি।
ইংরেজি x ও z অক্ষর ছাড়া বাকি ২৪ ইংরেজি আদ্যক্ষর দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার যত স্থানের নাম আছে সবগুলোতেই বিমান বন্দর রয়েছে। M আদ্যক্ষর দিয়ে সর্বোচ্চ ৭৭ টি স্থানে এবং U অক্ষর দিয়ে সবচেয়ে কম মাত্র ১ টি বিমানবন্দর আছে। ছোট বড় সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ১৩ হাজার ৭৫০টি বিমান রয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৪০০ টি যুদ্ধ বিমান। প্রতিদিন গড় ফ্লাইটের সংখ্যা ৯৯ হাজার ৩৪০ টি। অষ্ট্রেলিয়ানরা ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসে। যেমন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তেমনি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করে। বিশেষত ছুটির মৌসুমে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করে। এসময় বিমান কর্তৃপক্ষ বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তারপরেও তাদের ভ্রমণ বন্ধ থাকেনা। অস্ট্রেলিয়ায় মোট ১৩ টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর আছে। এগুলো হচ্ছে সিডনী , ব্রিসবেন মেলবোর্ন , পার্থ, এডিলেড, ক্যানবেরা, কেয়ার্ন্স, ডারউইন, গোল্ডকষ্ট, হোবার্ট, টাউনসিল, নিউক্যাসেল ও ল্যাঞ্চেনস্টোন। তবে প্রথম ৫ টিকেই মূল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও বাকি ৮টি বিমান বন্দরেও আন্তর্জাতিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দেখা যাক উল্লিখিত ৫টি বিমান বন্দরের সক্ষমতা কেমন।
*সিডনী বিমান বন্দর। যাকে বলা হয় কিংস্ফোর্ড স্মিথ বিমান বন্দর।এখানে টার্মিনাল ও রানওয়ে সংখ্যা ৩টি করে। এখানে ৯০০টি ফ্লাইট প্রতিদিন ওঠানামা করে। অর্থাৎ প্রতি দেড় মিনিটে একটি করে ফ্লাইট উড়ে। প্রতিদিন যাত্রী সংখ্যা হয় গড়ে দেড় লাখ। তথা প্রতিটি বিমানে যাত্রী সংখ্যা হয় গড়ে ১৬৬ জন।
*মেলবোর্ন বিমান বন্দর। যাকে বলা হয় তুল্লারামিন বিমান বন্দর। এখানে ২ টি টার্মিনাল রয়েছে। এখানে ৩৩টি অভ্যন্তরীণ ও একাধিক আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমান যাতায়াত করে। এখানে যাত্রী সংখ্যা হয় প্রতিদিন প্রায় ৬৫ হাজার।
* ব্রিসবেন বিমান বন্দর। এখান থেকে প্রতিদিন ২টি টার্মিনাল ও ২টি রানওয়ের মাধ্যমে ৫০টি অভ্যন্তরীণ ও ২৯ টি আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামা করে। প্রতিদিন ৭৭ টি ফ্লাইটে ৫৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।
* পার্থ বিমান বন্দর। এখানে ৫টি টার্মিনাল ও রানওয়ে আছে।এখান থেকে প্রচুর খনিজ মালামাল পরিবাহিত হয় বলে টার্মিনালের সংখ্যা বেশী। এখান থেকে প্রতিদিন ৭০টি ফ্লাইটে ৩৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।
* এডিলেড বিমান বন্দর। এখানে ১টি টার্মিনালের মাধ্যমে ২৯০ টি ফ্লাইটে ২১ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।উল্লিখিত হিসাব থেকে বলা যায় এই ৫টি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার মানুষ দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে যাতায়াত করে। সুতরাং বছরে ৭ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ অষ্ট্রেলিয়া থেকে বিমানে যাতায়াত করে। এর মধ্যে শুধু সিডনী বিমান বন্দর দিয়েই ৪কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রতি বছর যাতায়াত করে।
অষ্ট্রেলিয়ায় প্রথম বিমান সংস্থা হচ্ছে Quantas.।১৯২০ সালে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে নর্দারন টেরিটরি এরিয়েল সার্ভিস লিমিটেড এই যাত্রা শুরু করে। সিডনী বিমান বন্দরটি সিডনী মূল শহর থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দূরে মস্কট শহরতলিতে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বোটানি বে র পাশে অবস্থিত। ৯০৭ হেক্টর এলাকায় এই বিমান বন্দরটি গড়ে উঠে।বর্তমানে এই বন্দর ৪৬ টি অভ্যন্তরীণ এবং ৪৩ টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পরিসেবা দেয়। প্রতি বছর এই বিমান বন্দরে ফ্লাইটের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২৪ হাজার। সামগ্রিকভাবে বিশ্বের ২০ তম বিমান বন্দর হিসেবে পরিচিত। অষ্ট্রেলিয়ার বিমান চালক কিংসফোর্ড স্মিথ এর নামানুসারে এই বন্দরটির নামকরণ করা হয়। ১৯৩৩ সালে এর রানওয়ে নির্মিত হয়।
যে বক্তব্য দিয়ে লেখাটি শুরু করেছিলাম এবার সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বিমানে ভ্রমণ যে আরামদায়ক ও দ্রুততম সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা সস্তা ও জনপ্রিয় কিনা সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রয়োজন। অষ্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। সুতরাং ওই সকল স্থানে যাতায়াতের জন্য রেলপথ ও সড়কপথে প্রচুর সময় লাগে এবং ভাড়াও অনেক বেশী। প্রায় ৩/৪ গুন। যা নিয়ে তৃতীয় পর্বে আলোচনা করেছি। ফলে সকলেই আকাশপথের উপর নির্ভরশীল। তাই বলে রেলপথ ও সড়কপথ ব্যবহার হয়না তা নয়। তবে দীর্ঘ পথে নয়। ফলে সময় ও অর্থের দিক থেকে আকাশপথই জনপ্রিয়। বরং দেখা যাক অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর ভাড়া কত তার কয়েকটা উদাহরণ তুলে ধরি। অভ্যন্তরীণ রুটে সবচেয়ে দূরতম রুট হচ্ছে পার্থ থেকে কারাত্থা, পার্থ থেকে সিডনী ,পার্থ থেকে এডিলেড , সিডনী থেকে ডারউইন। এ রুটগুলোর দূরত্ব কম বেশি প্রায় ২ হাজার কিঃমিঃ। সময় লাগে ২/৩ ঘন্টা। ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। তবে ছুটির মৌসুমে ভাড়া কিছু বেশী হয়। এদিকে ক্ষুদ্রতম রুট যেমন এভন থেকে সিডনির দুরত্ব ৭৫৬ কি;মিঃ ভাড়া ১০২ ডলার , ব্যালিনা থেকে সিডনী ৬১২ কি;মিঃ ভাড়া ৯০ ডলার। সময় লাগে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় ঘন্টা। অষ্ট্রেলিয়ায় এমন অভ্যন্তরীণ রুটআছে অন্ততপক্ষে ৩০ টি। (সংক্ষেপিত) সিডনী সুপ্রভাত