1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
জুলাইয়ের হন্তারক কে? - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন

জুলাইয়ের হন্তারক কে?

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫
  • ৫২ জন খবরটি পড়েছেন

মোঃ মাসুম বিল্লাহ।
স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা আবেগভরে বলেছিলেন: ‘বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী; শুধু সুপ্ত সন্তান—শিয়রে রোরুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত। কে তাঁকে আশা দেবে? কে তাঁকে ভরসা দেবে? কে শোনাবে জীবন দিয়েও রোধ করব মরণের অভিযান?’(নাটক:সিরাজউদৌল্লাহ)।

সত্যিই, বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ ভয়ানক দুর্যোগের ঘনঘটা। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা স্বাধীন বাংলাদেশে নজিরবিহীন তেমনি এমন সমস্যা আগে কখনো ঘটেনি। অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ধীরগতি রাজনৈতিক দল পুরো ফায়দা নিচ্ছে। সাথে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রে নাস্তানাবুদ সরকার। নয় মাস পূর্বে দেশের নতুন বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের যে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল তা দিন দিন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে জুলাই তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে। জুলাই কোন রাজনৈতিক ব্যানারে হয়নি কিন্তু তার ক্রেডিট বাজাতি শুধু রাজনৈতিক দল নয় বরং জুলাই জনতাও কম যায় না। ফলে দেশে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

জুলাই শুধু একটি আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল জনগণের নতুন আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা ভেঙে নতুন বাংলাদেশ গড়ার একটা স্বপ্ন। যেখানে থাকবে না কোন অন্যায় শাসন- নির্যাতন অবিচার। যেখানে সকল মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের আপামর জনতা জুলাইয়ে সামিল হয়েছিল। ফলে বিজয় হয়েছিল জুলাইয়ের। কিন্তু জুলাই পরবর্তিতে সেই জুলাইয়ের অভ্যুত্থান বা জুলাইয়ের স্পিডটা চুরি হতে থাকে। চুরি হওয়ার পিছনে প্রধানত দায়ী বর্তমান এনসিপি। কেননা এই এনসিপি নেতারাই জুলাইয়ের অগ্র নায়ক হিসাবে ভূমিকা পালন করেছে। তারা যতটা না অগ্রনায়ক ছিল তার থেকে বড় কথা এদেশের মানুষ তাদেরকে অগ্রনায়ক মনে করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে না পেরে জুলাই থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য সৎ কিন্তু নিজেরা রাজনৈতিক দল হিসাবে বিরোধী হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলকে আমাদের দেশের কেউ ভালো চোখে দেখে না। এদেশের রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড দেখে তাদের প্রতি অনাস্থা বহুদিন থেকে। সেই জায়গায় এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করাতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আস্থার সংকটে ভোগে। এনসিপি নেতাদের হয়তো ধারণা ছিল তারা যেহেতু জুলাইয়ের শক্তি সুতারং সমগ্র বাংলাদেশ তাদেরকে সমর্থন করবে। কিন্তু না এদেশের মানুষ রাজনীতিবিদদের যে পছন্দ করেনা তা আবার প্রমাণ করল এনসিপির বিরুদ্ধে অবস্থান করে। এনসিপির নেতাদের এই খায়েশ এবং মাতব্বর সাজতে গেল ঠিক তখনই সিমপ্যাথির জায়গাটা দূরে চলে গেল। ফলে জুলাই তখন বিনষ্ট হতে শুরু করল। এই শিক্ষার্থীরা এই ছাত্র জনতা এই
জুলাইয়ের বীর চাইলে জুলাইটাকে আরো অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারতো। কিন্তু তারা নিজেদের খায়েশ পরিপূর্ণ করতে জুলাইকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। এদেশের জন্য তাদের এই ঐক্য ধরে রাখা সব চেয়ে জরুরি ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মৃত প্রায় হয়ে দাঁড়ালো। যার ফলে জুলাইয়ের ঐক্যটা বিনষ্টের পথে চলে গেল এবং পরাজিত শক্তি আবার মাথা তুলে প্রতিশোধে মত্ত হয়ে উঠলো।

জুলাই পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়া দরকার ছিল সেখানে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেলে ছাত্রসমাজ। মুলত জুলাই থেকে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা পর্যন্ত তাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা দরকার ছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সেই জায়গায় ব্যর্থ হয়েছে এবং শুধু চরমভাবে ব্যর্থ হয়নি বরং জাতিকে হতাশ করেছে। যাদের উপরে দায়িত্ব ছিল তারা জাতিকে ডুবিয়ে দিয়েছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। ফলে এখন তারা আহ্বান করলে লোকে সাড়া দিচ্ছে না। এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা যদি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্মে অবস্থান করতো তাহলে এদেশে আপামর জনতা ও ছাত্রদের পুনরায় এক করতে পারতো। কিন্তু তারা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বের হয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করে জুলাইটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। জুলাই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটা পরিবর্তন হতে পারতো। আমাদের দেশ একটা সুখী সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারতো। কিন্তু তা কতিপয় ছাত্রদের অদূরদর্শিতার কারণে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে ফেললো। যার ফলে এখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে নস্যাৎ হচ্ছে জুলাই চেতনা।

কি দোষ ছিল এই ছাত্র জনতার যারা জীবন বাজি দিয়ে জুলাইটাকে অর্জন করেছে, যারা পঙ্গুত্ববরণ করছে তাদের এই আত্মহতির কি অর্থ থাকলো? এজন্য এনসিপির সৈনিকরা আজীবন অপরাধী থেকে যাবে। এখনো সময় আছে, তারা বৈষম বিরোধী ব্যানারে আবার যদি একত্রিত হতে পারে সাময়িক সময়ের জন্য রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাটাকে দূরে রেখে দেশের কল্যাণে মানুষের কথা ভেবে সকলকে এক করতে পারে তাহলে কেবল এই সমস্যার উত্তরণ সম্ভব। তা না হলে বর্তমান সময়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে দেশের বিদেশের চাপ সামলে উঠে এই সরকার সুন্দর সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারবে না। ছাত্রদের দায়িত্ব তারা যেহেতু সাধারণ জনগণকে ঘর থেকে বের করেছে, তাদের ডাকে নেমে এসে, জীবন দিয়েছে সুতরাং সেই জীবনের মূল্য নিজেদের রক্ত দিয়ে হলেও শোধ করতে হবে। অন্যথায় অকৃতজ্ঞ হিসাবে ইতিহাসে স্থান পাবে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলকে সংযত ও দায়িত্বশীল আচারণ করতে হবে। তা না হলে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন ব্যবস্থার গলদ দূর হবে না। ফলে নির্বাচনের দাবির বদলে তা সুষ্ঠ করার পথ তৈরি করতে না পারলে তাদের থেকে জনগণ মুখ ফিরয়ে নেবে। আপনাদের মুল লক্ষ্য যদি হয় জনগণের সেবা তবে সে সেবার পথ অবারিত করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। নিবার্চন নির্বাচন মন্ত্র জপ করে ক্ষমতা লোভের রাজনীতি এদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। সে রাজনীতি ঘৃণাভরে এদেশের জনগণ প্রত্যাখান করেছে। যাদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজকে স্বাধীনতা ভোগ করার সুযোগ হয়েছে তাদের জন্য সর্বচ্চো ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কৃতজ্ঞতার পরিচয় দিতে না পারলেও যেন কৃতঘ্নতার পরিচয় না দি সে দিকে সজাগ থাকতে হবে। দেশ মাতৃকার সেবায়, দেশের কল্যাণে সকলকে এক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলে চেয়ে দেশ বড়।“

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews