1. bdtelegraph24@gmail.com : বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক :
  2. mirzagonj@bdtelegraph24.com : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি : মির্জাগঞ্জ প্রতিনিধি
  3. tarim7866@gmail.com : তারিম আহমেদ : তারিম আহমেদ
ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক! উপকূলের মানুষের উৎকণ্ঠা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ - টেলিগ্রাফ বাংলাদেশ
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রের হাতে শুরু, ইসরায়েলে আক্রমণ-ইরানের পরমাণু যাত্রার ৭০ বছরের পরিণতি কুড়িগ্রাম সোনাহাট সেতুর পাটাতন ভেঙে স্থলবন্দরের যান চলাচল বন্ধ অভয়নগরে বিএনপির  তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে অনুপস্থিত ২২ হাজারের বেশি, বহিষ্কার ৪১ বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ শ্যামনগরে পরিবেশ বান্ধব ব্যবসা প্রসারে উদ্যোক্তাদের মাঝে উপকরণ বিতরণ বিএনপি নেতার পাওনা টাকার চাপে কৃষকদল নেতার ‘আত্মহত্যা’র অভিযোগ উপকূলে সুপেয় পানি অধিকার সচেতনতায় “পানির কথা” অনুষ্ঠিত ছাত্রকে বস্তায় ভরে ছাদে ফেলে রাখার অভিযোগে শিক্ষক গ্রেপ্তার বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক! উপকূলের মানুষের উৎকণ্ঠা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫
  • ৮০ জন খবরটি পড়েছেন
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর খাদ্য গুদাম মসজিদে সামনের বেড়িবাঁধে ফাটল।

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মাঝে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মাঝে উপকূলবাসীর উৎকণ্ঠা ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে। মে মাস এলেই ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক বাড়তে থাকে উপকূলের লোকজনের মধ্যে। ২০০৯ সালের ২৫ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এরপর ২০২০ সালের ১৩ই মে আম্ফান ও ২০২৪ সালের ২৬শে মে রিমাল শ্যামনগর উপকূলে আঘাত হানে। এতে মুহুর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা। এবারও চলতি মে মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সম্ভাব্য দুটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘শক্তি’ ও ‘মন্থা’।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ২৯, ৩০, ও ৩১ মে (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) দেশের কয়েকটি বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া সম্ভাব্য লঘুচাপ বা নিম্নচাপ অথবা গভীর নিম্নচাপের ফলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলে প্রভাব ফেলতে পারে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ৩১ মের মধ্যে ওড়িশা-মায়ানমার সীমান্তবর্তী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ফলে উপকূলের মানুষের মাঝে নদীর বাঁধ ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা শুনে নিজের আশঙ্কার কথা বলছিলেন শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনীর দাঁতিনাখালী গ্রামের খালেকুল গাজী (৪৫)। গত চার বছরের মধ্যে তিনবার ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভাঙনের পাশাপাশি তাঁর বসতঘরও ভেঙেছিল। এসব পরিস্থিতি সামাল দিয়ে নতুন ঘর তুলে এখন বাঁধের পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। আবারও ঝড়ের সংকেত শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সরজমিনে, সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীতীরবর্তী দাঁতিনাখালী, বুড়িগোয়ালিনী, খোলপেটুয়া নদীতীরবর্তী ভামিয়া ও মুন্সিগঞ্জের চুনকুড়ি নদীর তীরবর্তী সিংহড়তলী এলাকা গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বহু মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের আশঙ্কা, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে বেড়িবাঁধটি উপচে কিংবা ভেঙে পুরো এলাকা লোনাপানিতে ভেসে যাবে।

সুন্দরবন সংলগ্ন মালঞ্চ নদীতীরবর্তী দাঁতিনাখালী গ্রামের বাসিন্দা জহুরা বিবি (৪০) বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় নিজেদের বাড়িঘর জায়গাজমি সব নদীতে বিলীন হয়েছে। সেই থেকে বাঁধের পাশে কোনোরকমে বসবাস করছি। প্রতিবছর একটা না একটা দুর্যোগ লেগেই আছে। তিনি আরও বলেন, ‘শুনতিছি আবার বড় ঝড় হবে। এবার ঝড়ে বাঁধ ভাঙলি কনে যাব তার ঠিক নেই। গাঙের পাড়ে থাকার মতো কায়দাও (পরিবেশও) এখন আর নেই।’

সিংহড়তলী গ্রামের প্রভাষ মন্ডল বলেন, ঝড় এলেই সবাই সাইক্লোন শেল্টারে যেতে বলে। কিন্তু আমাদের মালামাল কোথায় রেখে যাব। আমরা গরিব মানুষ সম্পদের মধ্যে আছেই শুধু গরু, ছাগল এবং মাছ ধরার জাল ও নৌকা। এইগুলো রেখে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।

নতুন করে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা উপকূলবাসীকে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে উপকূলীয় জনপদে বসবাসকারী জনসাধারণ। কারণ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চললেও বেশ কিছু স্থান এখনো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহরতলী গ্রামের চুনকুড়িঁ নদীর বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ১৪৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বাঁধের ওই অংশ ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট প্লাবন মোকাবেলার সক্ষমতা রাখে না। এমনকি আগামী বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে এখানকার ২৭টি পয়েন্ট অতি ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো হলো বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালি, আটুলিয়া ইউনিয়নের বড় কুপট, খোন্তাকাটা ও সরদারবাড়ি, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কামালকাঠি, ঝাপা, চাউলখোলা ও পশ্চিম পাতাখালি, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঝাপালির মমিন নগর, কৈখালী ইউনিয়নের মির্জাপুর, দক্ষিণ জয়াখালী ও জয়াখালী হুলা, মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের মৌখালী গাজী বাড়ি মসজিদসংলগ্ন, হরিনগর খাদ্যগুদাম ও সিংহরতলী, গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, গাগড়ামারি ও কালিবাড়ী প্রভৃতি। আগেও পূর্ব ও পশ্চিম দুর্গা বাটি, দাতিনাখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।

যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দাবি করছেন, উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরো কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

তবে পাউবো কর্মকর্তাদের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল পাওয়া যায়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এক হাজার ২৩ কোটি টাকার ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নম্বর-১৫ পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০২১ সালে এবং ২০২২ সালে একনেকে পাস হয়। এই মেগাপ্রকল্পগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ছোট প্রকল্প নেওয়া হয়।

পাউবো’র অফিস সূত্রে জানা গেছে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন’ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বেড়ীবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও আবারো ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে। প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সময়মতো মেরামতের উদ্যোগ নিলে কম খরচ ও কম সময়ের মধ্যে মানসম্মত কাজ করা সম্ভব। কিন্তু বর্ষার আগমুহূর্তে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। এতে একদিকে খরচ বাড়ে, অন্যদিকে তড়িঘড়িতে কাজ হয় নিম্নমানের। ফলে উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকার ঝুঁকি কমছে না, বরং বাড়ছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনী খাতুন বলেন, এখনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি, ঘূর্ণিঝড়ের খবরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত ১৫ মে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন সার্বিক বিষয় সব সময় নজরদারিতে রাখবে।

সাতক্ষীরা উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (শ্যামনগর পওর উপ-বিভাগ) মো: ইমরান সরদার। তিনি বলেন, বিভিন্ন পোল্ডারের বাঁধ পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক স্থানে সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। এ ছাড়া জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2024
Theme Customized By BreakingNews