কাবুল, ৯ জুন: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিশ্বের প্রথম ‘আধুনিক’ শহর হতে চলেছে যেখানে সম্পূর্ণ পানিশূন্যতা দেখা দেবে, এমন মারাত্মক পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এনজিও মার্সি কর্পসের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দ্রুত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মিলিত প্রভাবে গত দশকে কাবুলের জলাধারের পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে।
বর্তমানে কাবুলের বাসিন্দাদের খাবার পানির প্রধান উৎস বোরহোলগুলোর প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। প্রতি বছর প্রাকৃতিক রিচার্জ হারের চেয়ে ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। মার্সি কর্পস আফগানিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডেইন কারি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংকট মোকাবেলায় জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “পানি না থাকার অর্থ হলো মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাবে, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি আফগানিস্তানের পানির চাহিদা পূরণ না করে তবে আফগান জনগণের জন্য বাড়বে অভিবাসন এবং তা আরও কষ্টের কারণ হবে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির প্রায় ৮০ শতাংশই অনিরাপদ হিসেবে বিবেচিত, যেখানে উচ্চমাত্রার পয়ঃনিষ্কাশন, লবণাক্ততা এবং আর্সেনিকের উপস্থিতি রয়েছে। এই সংকট শহরের সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে; কিছু পরিবার তাদের আয়ের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুধু পানিতে ব্যয় করছে, এবং দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার পানি সম্পর্কিত ঋণের বোঝায় জর্জরিত। কাবুলের খায়েরখানা পাড়ার শিক্ষিকা নাজিফা বলেন, “আফগানিস্তান অনেক সমস্যার মুখোমুখি, কিন্তু এই পানির সংকট সবচেয়ে কঠিন সমস্যার মধ্যে একটি। প্রতিটি পরিবারই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের আয় কম। পর্যাপ্ত, ভালো মানের কূপের অস্তিত্বই নেই।”
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে কিছু বেসরকারি কোম্পানি নতুন কূপ খনন করে সরকারি ভূগর্ভস্থ পানি চড়া দামে বিক্রি করছে। নাজিফা জানান, আগে যেখানে ১০ দিনে ৫০০ আফগানি খরচ হতো, এখন একই পরিমাণ পানির জন্য ১,০০০ আফগানি লাগছে।
২০০১ সালে কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ১০ লক্ষেরও কম, যা এখন সাতগুণ বেড়ে গেছে, ফলে পানির চাহিদা বেড়েছে নাটকীয়ভাবে। কেন্দ্রীভূত শাসন ও নিয়ন্ত্রণের অভাবও এই সমস্যাকে কয়েক দশক ধরে স্থায়ী করে তুলেছে। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (OCHA) ঘোষণা করে যে, আফগানিস্তানে পরিকল্পিত পানি ও স্যানিটেশন কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় ২৬৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে তাদের অংশীদাররা মাত্র ৮.৪ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক পানি ও স্যানিটেশন তহবিলের আরও ৩ বিলিয়ন ডলার স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি তহবিলের ৮০ শতাংশের বেশি হ্রাস করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। ডেইন কারি বলেন, “সবকিছুই সাহায্যের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। আমরা স্বল্পমেয়াদী পানির সমস্যার সমাধানের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করতে পারি এবং বলতে পারি যে আমরা প্রয়োজনটি পূরণ করেছি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য আরও ভাল বিনিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রয়োজন অব্যাহত থাকবে।”
পাঞ্জশির নদীর পাইপলাইন প্রকল্প, যা সম্পন্ন হলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর শহরের অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে এবং ২০ লক্ষ বাসিন্দাকে খাবার পানি সরবরাহ করতে পারে, তার নকশা ২০২৪ সালের শেষের দিকে সম্পন্ন হয়েছে এবং এখন বাজেট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকার ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিপূরক হিসাবে অতিরিক্ত বিনিয়োগকারী খুঁজছে। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একজন সিনিয়র গবেষক ডঃ নাজিবুল্লাহ সাদিদ অবিলম্বে পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “আমাদের বাজেটের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার সময় নেই। আমরা এমন এক ঝড়ের কবলে পড়েছি যেখান থেকে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে আর কোনও প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে না।