রাকিবুল হাসান,, কুড়িগ্রাম।।
কুড়িগ্রাম জেলার বিস্তৃত চরাঞ্চলে এবারও কিছু অঞ্চলে বন্যা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু রয়ে গেছে তার তীব্র ছাপ। জেলার ১৬টি নদ-নদী আর সাড়ে চার শতাধিক চর জুড়ে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ এখন নতুন করে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার সংগ্রামে ব্যস্ত।
প্রতিবছরের মতো এবারও চরাঞ্চলগুলোতে নদীর পানি হু হু করে ঢুকে পড়েছিল। ডুবে গিয়েছিল ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন সেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নতুন করে ঘর তুলছে তারা, বানিয়ে নিচ্ছে ভাঙা নৌকা, আবার বীজ রোপণের প্রস্তুতিও নিচ্ছে কেউ কেউ।
চরাঞ্চলের জীবন সবসময়ই বিচ্ছিন্ন আর কষ্টসাধ্য। মেইনল্যান্ড থেকে দূরে থাকায় অনেক চরেই নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার সময় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এসব গ্রাম। খাবার, পানীয় জল, ওষুধসহ ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতেই তখন হিমশিম খেতে হয় বাসিন্দাদের।
তবুও হাল ছাড়েন না তারা। সকালে নদীতে মাছ ধরা, বিকেলে ক্ষেতে কাজ, আর সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে কুয়াশাঘেরা আকাশের নিচে সময় কাটানো—এই নিয়েই চলে তাদের দিনযাপন। বিনোদনের তেমন কিছু নেই, কিন্তু প্রকৃতি যেন এদের পুরস্কার দেয় দুই হাতে। নদীর কুলকুল ধ্বনি, চরজুড়ে ছুটে চলা হাওয়া আর শিশুদের নির্ভেজাল হাসি যেন নতুন আশার সুর বয়ে আনে।
চরের এক বাসিন্দা বলেন, “প্রতি বছরই এই কষ্ট আসে। তবুও আমরা থাকি। নদী আমাদের নেয়, আবার কিছু না কিছু দেয়ও। এখানেই তো আমাদের জন্ম, এখানেই মাটি।”
স্থানীয়রা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, চরাঞ্চলের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বাঁধ নির্মাণ, চিকিৎসা সুবিধা, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দরকার। নয়তো প্রতিবছরই এইসব মানুষদের বাঁচা মানে কেবল বন্যার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানো।