ডেস্ক নিউজ।
বাংলাদেশের আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচটি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ধর্মভিত্তিক দল একটি নির্বাচনি সমঝোতায় পৌঁছেছে। এই সমঝোতায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলাম পার্টি (একাংশ) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি দল থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটিও গঠিত হয়েছে।
দলগুলোর নেতারা দীর্ঘদিন ধরে একটি ইসলামি ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা করে আসছিলেন। এই নির্বাচনি সমঝোতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন মাধ্যমে জামায়াতের নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর ঐক্যের কথা শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নেতারা এটিকে ‘অপপ্রচার’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে, কোনো কোনো দল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জামায়াতকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে অপেক্ষায় রয়েছে।
জমিয়তের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, এই উদ্যোগটি মূলত ‘এক প্রার্থী কেন্দ্রিক বা ভোটের একটি বাক্স’ তৈরি করা, যা এখনো প্রক্রিয়াধীন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হয়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বৃহত্তর কোনো জোটে যাওয়ার বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে এখনও মতপার্থক্য রয়েছে।
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সভায় পাঁচটি বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের জন্য আসনভিত্তিক একক প্রার্থী নিশ্চিত করা, আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা, আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী দল’ আখ্যা দিয়ে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা, যৌক্তিক সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করা। ইসলামী আন্দোলনের বৈঠকের পর অন্যান্য দলের কার্যালয়েও প্রতিনিধিরা বৈঠক করেছেন।
জামায়াতের সঙ্গে অন্য ইসলামি দলগুলোর সম্পর্ক নিয়ে এখনো এক ধরনের ধোঁয়াশা রয়েছে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ইসলামি নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং অন্যান্য ইসলামি দলের নেতারাও জামায়াতের কার্যালয়ে গিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলো জামায়াতকে বাদ রেখেই ঐক্য প্রচেষ্টা শুরু করলেও, চূড়ান্তভাবে তাদের বাইরে রাখার বিষয়ে সব দল একমত নয়। জামায়াতও শেষ পর্যন্ত এই দলগুলোর সঙ্গে নাকি ছাত্রদের দল এনসিপির সঙ্গে জোট করবে, তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সাম্প্রতিক এক যৌথ বিবৃতির বিষয়ে তার দলের বিরোধিতাকে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে ‘ইনফরমাল যোগাযোগ’ থাকলেও, চূড়ান্ত ঐক্যের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।
এদিকে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনে তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে এবং খুব শিগগিরই ৩০০ আসনে প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করবে। দলটি আগামী ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি মহাসমাবেশ ডেকেছে, যেখানে তারা পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানাবে। এই সমাবেশের পরই দল মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে ইসলামী আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম জানিয়েছেন।