বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক ।
জামানতের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি ঋণ দেওয়ায় দেশের ২০টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ‘লাল তালিকাভুক্ত’ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৮৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের আমানতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা হলেও জামানত রয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার। অর্থাৎ, ঋণের বিপরীতে জামানতের হার মাত্র ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গ্রাহকদের মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জামানতের ঘাটতির পাশাপাশি ঋণগ্রহীতার আর্থিক সক্ষমতা যাচাই না করাই এমন অবস্থার জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে জামানতের তথ্য কোনো নিরপেক্ষ সংস্থা দিয়ে যাচাই করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের লাইসেন্স বাতিলের আগে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এক সাক্ষাৎকারে জানান, অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার মুখে। “আমরা এখন অবসায়ন বা একীভূতকরণের মাধ্যমে একটি সমাধানের পথে হাঁটছি। এর জন্য প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে,” বলেন তিনি।
লাল তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে: এফএএস ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, বিআইএফসি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিংসহ আরও ১৩টি প্রতিষ্ঠান।
ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএনএম গোলাম সাব্বির বলেন, “২০১৯ সালে পিপলস লিজিং বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আমানতকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। এখন ৯০ শতাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত চাইছেন, কিন্তু ব্যাংক থেকে কোনো সহায়তা আমরা পাচ্ছি না।”
বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গণমাধ্যমে কারণ দর্শানোর নোটিশের খবর ছড়িয়ে পড়ায় গোটা খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব মনে করেন, এনবিএফআইগুলো ঋণগ্রহীতার পরিশোধ সক্ষমতা যাচাইয়ে ব্যর্থ হওয়াই মূল সংকটের সূচনা করেছে। জামানত হলো দ্বিতীয় নিরাপত্তা, প্রাথমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় আর্থিক যাচাইয়ের মাধ্যমে—যা এখানে উপেক্ষিত হয়েছে।