বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক।
২০০৯ সালের ২৫ জুন। সেদিন পৃথিবী থমকে গিয়েছিল। ৫০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান পপের রাজা মাইকেল জ্যাকসন। শুধু একজন শিল্পী নয়, তিনি ছিলেন এক যুগের প্রতীক, যিনি সঙ্গীত, নাচ আর স্টাইল দিয়ে বিশ্ব সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিলেন। “বিলি জিন” থেকে “থ্রিলার”, “স্মুথ ক্রিমিনাল” থেকে “ব্ল্যাক অর হোয়াইট”—তার প্রতিটি সুর, প্রতিটি বিটে লুকিয়ে ছিল বিদ্যুৎ-ঝলমলে এক জগৎ।
১৯৯৭ সালের জুলাই। ফ্রান্সের নিম শহরের এক কনসার্টে সাদা স্পোর্টস মোজা পরে মঞ্চ মাতিয়েছিলেন মাইকেল। মোজার গায়ে ছিল ঝিকিমিকি রাইনস্টোন, যা স্পটলাইটে পড়ে ঝলসে উঠত। মঞ্চে যখন তার কিংবদন্তি ‘মুনওয়াক’ ভেসে বেড়াত, তখন সেই মোজাই যেন তার নাচের অংশ হয়ে উঠেছিল।
বহু বছর পর, সেই মোজাটি ফিরে এল খবরের শিরোনামে। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত এক নিলামে এটি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ডলারে—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। প্রত্যাশা ছিল তিন-চার হাজার ডলার, কিন্তু মাইকেলের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা দামকে দ্বিগুণ করেছে।
নিলামদাতা অরোর ইলি জানান, ১৯৯৭ সালের সেই কনসার্ট শেষে মাইকেলের ড্রেসিংরুমের পাশে মোজাটি পড়ে থাকতে দেখেন এক টেকনিশিয়ান। ঝকঝকে রাইনস্টোনের গায়ে সময়ের ছাপ পড়েছে—কিছু অংশ হলুদ হয়ে গেছে, ঔজ্জ্বল্য ম্লান হয়েছে, তবু এটি রয়ে গেছে ইতিহাসের এক টুকরো।
মাইকেলের জীবন কেবল গান নয়, এক অবিরাম সংগ্রামের গল্পও। শৈশবে জ্যাকসন ৫-এর হয়ে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ, তার পর একক ক্যারিয়ারে অভূতপূর্ব সাফল্য, মঞ্চে বিদ্যুতের মতো নাচের ভঙ্গি—সবই তাকে পপের রাজা বানিয়েছে। কিন্তু সেই সাফল্যের আড়ালে ছিল একাকীত্ব, বিতর্ক আর শারীরিক অবসাদ।
তার মৃত্যুর পরও স্মারক, গান, ভিডিও, এমনকি একটি মোজাও মানুষের হৃদয়ে তার প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে রাখে। ২০২৩ সালে প্যারিসে তার একটি টুপি বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার ডলারে। প্রতিবার এসব নিলাম যেন প্রমাণ করে—মাইকেল আর নেই, কিন্তু তার প্রভাব ও উত্তরাধিকার চিরজীবী।
২০০৯ সালের গ্রীষ্মে চেতনানাশক প্রোপোফলের অতিরিক্ত সেবনে যখন মাইকেলের জীবনাবসান ঘটে, সঙ্গীত জগৎ হারায় এক অনন্য নক্ষত্র। চিকিৎসক কনরাড মারে পরে দণ্ডিত হন, কিন্তু ভক্তদের হৃদয়ে মাইকেল অমর।
আজ সেই ঝলমলে মোজা নতুন এক ভক্তের হাতে। হয়তো তা কোনো শোকেসে প্রদর্শিত হবে, অথবা গোপনে রক্ষিত থাকবে। কিন্তু প্রতিটি সেলাই, প্রতিটি রাইনস্টোন যেন বলে যাবে—এটি এক সময় ছুঁয়ে ছিল ইতিহাসের সেরা পারফর্মারের পা।