বিশেষ প্রতিনিধি।
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাবেক চার সংসদ সদস্যসহ ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পর রোববার (১৭ আগস্ট) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালতে এই মামলার আবেদন করেন মো. জামাল উদ্দিন গাজী নামে এক ব্যবসায়ী। আদালত এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বাদী মামলার আবেদনে ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, একই আসনের আরেক সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নাম আসামি হিসেবে রয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের তালিকায় জেলা-উপজেলা পরিষদে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।
আবেদনে বলা হয়, মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী একজন ব্যবসায়ী। গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেন। এ সময় মামলায় উল্লেখিত আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মিছিল নিয়ে মহিপালের দিকে অগ্রসর হতে হতে গুলি চালান। বাদী প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়কের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে আসামি ও তাদের সহযোগীরা রাইফেল-শটগান দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। এতে বাদীর বাম পায়ের হাঁটুর নিচে একটি গুলি লেগে হাড়ের মধ্যে বুলেট আটকে যায় এবং বাম পায়ের গোড়ালিতে একটি গুলি লাগে। পরবর্তীতে আসামিদের করা গুলিতে বাদীর ডান হাতের কব্জিতে একটি, কনুইয়ে একটি, বাম হাতের কব্জিতে পাঁচটি, কনুইয়ে একটি এবং গায়ে মোট চারটি গুলির আঘাত লাগে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠি, লোহার রড ও রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে তাকে গুরুতর জখম করা হয়। পরে তাকে মৃত ভেবে ফেলে যান হামলাকারীরা। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও পরে অ্যাপোলো হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার শরীর থেকে বুলেট অপসারণ করেন।
চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে সময় লেগেছে উল্লেখ করে বাদী বলেন, হামলার ঘটনায় গত ২৬ জুন তিনি ফেনী মডেল থানায় এজাহার দাখিল করেন। এজাহার গ্রহণ করলেও তবে ওসি তাকে পরে এ বিষয়ে ডাকবেন বলে জানান। পরে যোগাযোগ করলে ওসি তাকে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলা নেয়া যাবে না।
দীর্ঘদিন পর মামলা করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন গাজী বলেন, আমার শরীরে নয়টি গুলি লেগেছিল। এজন্য দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এখনো একটি অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে। অসুস্থতার কারণে মামলার আবেদন করতে দেরি হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে ফেনী মডেল থানায় মামলার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশের গড়িমসির কারণে পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
মামলার আবেদন করার বিষয়টি ফেনী আদালতে নিযুক্ত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, আদালতে ওই ব্যক্তি মামলার যে আবেদন করেছেন, সেখানে ওসিকে জড়িয়ে যা লেখা হয়েছে, তা সত্য নয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মহিপালের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে। আদালতে মামলা করতে গিয়ে বাদী মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি।
ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খাঁন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাবেক চার সংসদ সদস্যসহ ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালতে হত্যাচেষ্টা মামলার আবেদন করেছেন। আদালত এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।