রফিকুল ইসলাম দেবহাটা(সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি।
সাতক্ষীরার জেলার দেবহাটা কালিগঞ্জ জুড়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাতে মানা হচ্ছে না সরকারি কোন নিয়ম নীতি। পরিবেশ অধিদপ্তরের এবং মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন না নিয়ে এখানে শুরু হয় গলাকাটা ব্যবসা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে দেবহাটায় ৫ টি ক্লিনিক ১টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং কালীগঞ্জ জুড়ে ১৬ টি ক্লিনিক এবং ১৭ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এই সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশের নেই নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসব ক্লিনিকে এসে রোগী দেখেন। নার্স সংকট থাকায় বেশির ভাগ ক্লিনিকে আয়া ,ওয়ার্ড বয় দিয়ে নার্সের কাজ করানো হয়।
ফলে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা বাইরে টানানো সাইনবোর্ডের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে নানান বিড়ম্বনার শিকার হন। ভুল অপচিকিৎসার কারণে সেবা নিতে আসা অসুস্থ রোগীরা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় বাড়িতে। অধিকাংশ ক্লিনিকে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটলেও কোন আইনি পদক্ষেপ না থাকায় পার পেয়ে যায় ক্লিনিক মালিকরা। নাই কোন ভ্যাট ট্যাক্সের যথাযথ কাগজপত্র। যে কারণে সরকার একটি মোটা অংক টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
বর্তমান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরা জেলা সদরের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাবের ঝটিকা অভিযানে ২/১ টি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অধিকাংশ ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের যথাযথ মনিটরিং না করায় মালিকরা ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক বিভিন্ন ক্লিনিকের ব্যবসায়িক পার্টনার। তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ক্লিনিকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা ছাড়া মৃত্যুর লাশ নিয়েও ফিরতে হয়। অধিকাংশ ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল খ্যাত গ্রাম্য ডাক্তাররা মোটা অংকের কমিশনের লোভে রোগী ধরার মিশনে ব্যস্ত থাকে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোর ছত্র ছায়ায় তাদের নিজস্ব আঙ্গিনায় গড়ে উঠেছে ক্লিনিক কাম ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, নিরীক্ষা এখানে করা হয়। ২/১ টি ক্লিনিক ছাড়া প্রায় সব ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসক না থাকায় বাইরে থেকে চিকিৎসক এনে মোটা অংকের ভিজিট আদায় করে রোগীদের সেবা নিতে বাধ্য করা হয়।
অনুমোদন বিহীন গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ পালন করতে দায় ছাড়া ভাবে ২/১ টি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। পরে অদৃশ্য কারণে গতি কমিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। অবস্থা দেখে মনে হয় এই সমস্ত অসাধু বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জিম্মি।
ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোন হাল নাগাদ বৈধ কাগজপত্র নাই। অথচ বছরের পর বছর মাসোহারা নিয়ে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা দেখ ভার করে আসছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে দেবহাটা কুলিয়া মায়ের কোল ক্লিনিক কুলিয়া ক্লিনিক,পারুলিয়া মোমেনা হাসপাতাল, সখিপুর গাজী ক্লিনিক,সিটি ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে,ও কালিগঞ্জ সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নলতা ডায়াবেটিক্স এন্ড জেনারেল হাসপাতাল,নলতার নাহার সার্জিকাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডিজিটাল ল্যাবের মেয়াদ ৩০/৬/২৪ ইং তারিখে শেষ। অথচ এ ক্লিনিক মালিক নিজেকে একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকে।
সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাক্তার আ ফ ম রুহুল হকের প্রতিষ্ঠিত নলতা হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২১ ইং তারিখে শেষ। আহছানিয়া মিশন চক্ষু এন্ড জেনারেল হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২০২৩ ইং তারিখে শেষ। নলতা আহসানুল্লাহ ক্লিনিকের মেয়াদ গত ৩০/৬/২০১৯ ইং তারিখে শেষ। শেরে বাংলা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২০১৯ ইং তারিখে শেষ।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার অনন্যা রানীর মালিকাধীন নলতার হিজলার মোড় নামক স্থানে তার পালিত পুত্র ধৃতি এবং মাসুদুল হকের নামে ইউনিক ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য অনুমোদনের জন্য আবেদন করা থাকলেও কোন অনুমোদন নাই। নলতার ফ্যামিলি হেলথ কেয়ারের কোন অনুমোদন নাই। নলতার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবেদন করা থাকলেও অনুমোদন নাই।
কালিগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ডাক্তার হযরত আলী ডিজিটাল ল্যাব এন্ড হাসপাতালের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২৪ ইং তারিখে শেষ। কালিগঞ্জ সার্জিক্যাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬ /২০১৯ ইং তারিখে শেষ। যমুনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২০১৮ ইং তারিখে শেষ। কিছুদিন আগে এই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঝরনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদনের মেয়াদ গত ৩০/৬/২০১৯ ইং তারিখে শেষ। তবে ক্লিনিক মালিক মিলন নিজে কোন ডাক্তার না হয়েও হর হামেশা সিজার এপেন্ডিসাইডের মতন অপারেশন করে থাকলেও দেখার কেউ নাই। কালীগঞ্জের পাও খালিতে অবস্থিত রিডা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন মেয়াদ গত ৩০/৬/২০২৪ ইং শেষ।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের রেডিও টেকনোলজিস্ট জাহাঙ্গীর আলমের মালিকাধীন ভাই গোলাম মোস্তফার নামে গত ৩০/৬/২১ তারিখে অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হলেও আজও কোন নতুন করে অনুমোদন মেলেননি। সেখানে ডাক্তার মনিরুজ্জামান নামে একজন রোগী দেখার কথা বললেও অধিকাংশ সময় তাকে পাওয়া যায় না । কয়েক মাস আগে রোগীর রক্ত পরীক্ষায় ভুল রিপোর্টের কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
কালিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে আমতলা মোড়ে এ আলী ক্লিনিকের গত ৩০/৬ /২০১৭ ইং তারিখে আবেদন করা থাকলেও কোন অনুমোদন নাই। কৃষ্ণনগরে বন্ধন হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ল্যাবের অনুমোদন গত ৩০/৬/২৫ শেষ। কালীগঞ্জের হরমোন ক্লিনিকে কোন অনুমোদন নাই বা আবেদনও করা হয়নি। ক্লিনিগুলোতে সপ্তাহের ছুটির দিনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে একাধিক চেম্বার খুলে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অংকের গলাকাটা ফিশ। অযথা টেস্টের নামে চলে কমিশন বাণিজ্য।
এদিকে শ্যামনগর -কালিগঞ্জ মহাসড়কের পাশে রোকেয়া মুনসুর ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন মনিরুল ইসলাম মিলনের ঝরনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোন ডাক্তার বা নার্স না থাকলেও মাসোহারা দিয়ে ঠিকই চালিয়ে আসছেন। মহৎপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে আবিদ হোসেন ময়নার এ আলি ক্লিনিক কোন ডাক্তার নার্স বা কাগজপত্র ছাড়া চলে আসছে বছর পর বছর। মৌতলা ফ্যামিলি ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসলেও তাদের কোন অনুমোদন নাই।
উত্তর কালিগঞ্জের আব্দুস সালাম সার্জিক্যাল ক্লিনিক এবং বাস টার্মিনাল সংলগ্নে হযরত আলী আলী ক্লিনিক পরিচালনা হয়ে আসলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স না থাকায় আয়া দিয়ে সব সেবা প্রদান করা হয়। হযরত আলী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবে ফজলুল ইসলাম নামে এক রোগীকে এপেন্ডিসাইড অপারেশন শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার জরায়ুতে ইনফেকশন হয়েছে এমন ভুয়া রিপোর্টের ভিত্তি এবং ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
নলতা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারে লাইভ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হয়ে আসলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা নার্স নাই অথচ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি। এ ছাড়াও নলতা শেরে বাংলা ক্লিনিক, নাহার, ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার , নলতা ডায়াবেটিক হাসপাতাল,নামে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক চললেও সেখানে নীতিমালা অনুযায়ী কোন ডাক্তার বা ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজিস্ট পাওয়া যায়নি।
এরপরও উপজেলা জুড়ে গজিয়ে ওঠা অনুমোদন বিহীন মানহীন ব্যাঙের ছাতার মত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক গুলো সাধারণ মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে চিকিৎসার নামে অপ চিকিৎসা চালিয়ে বছরের পর বছর জনগণকে ধোকায় ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও দেখার কেউ নাই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান জেলা জুড়ে অনুমোদন বিহীন ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট জমা দেওয়া হয়েছে উনি এটার প্রশাসনিক ভাবে ব্যবস্থা নিবেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে উপজেলা বাসী।