পুলিশের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শাহীন হোসেনের পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকী আজ। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর শাহীন হোসেন মারা যান।
শাহীন হোসেন বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শাহাতাব বিশ্বাসের ছেলে। ২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহীন কে বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও বাঘারপাড়া থানা পুলিশের একটি দল নিজ বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ভাটার আমতলায় পুলিশের ওপর কক্টেল হামলা ও মারপিটের সাথে মাইক্রোচালক শাহিন এবং বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ভূট্টো জড়িত।
শাহীনের পরিবারের সদস্যরা জানান, পুলিশ পরে যশোর-মাগুরা মহাসড়কের ভাটার আমতলায় নিয়ে গিয়ে শাহীন হোসেনের বাম পায়ে দুটি গুলি করে । এরপরে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় তাকে পেট্রোল বোমা দিয়ে একটা মামলা দেয় এবং যশোর সদর হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যশোর সদর হাসপাতাল, খুলনা ২৫০ শয্যা এবং সবশেষে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন থাকার পরে পুলিশ তাকে যশোর জেলখানায় হস্তান্তর করে। এসময় শাহীনের নামে ১ ডজন মামলা দেয়া হয়।
এব্যপারে কথা হয় শাহীন হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেন ভূট্টোর সাথে। তিনি জানান সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ। তিনি ভাই হারানোর যন্ত্রনা নিয়ে জানান, কী ছিলো আমার ভাইয়ের অপরাধ ? একজন সাধারনশখেটে খাওয়া মানুষ । তার অপরাধ সে রাজনৈতিক দল বিএনপি ‘র একজন সমর্থক ?
ভূট্টো বলেন, আমি তখন ফেরারি জীবন নিয়ে ঝুকিপূর্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়িয়েছি। একপর্যায়ে আমি নিজে হাজির হয়ে জেলখানায় গেলাম। জেলখানায় নির্যাতিত অসুস্থ ভাইকে কেঁদেছিলাম। আজ আমার ভাই পুলিশের গুলিতে পঙ্গু হয়ে ১২ মামলার আসামি যার একটিতেও তখনো জামিন হয়নি। শাহীন ভাই জেলখানায় অযত্ন-অবহেলায় দুঃসহ কষ্ট যন্ত্রণা নিয়ে পড়ে আছে।
তিনি জানান, আমি জেলখানায় থেকেই ওর এগারটি মামলায় জামিন করাতে সক্ষম হলাম। এরপর আমি জামিন পেয়ে জেলের বাইরে এসে শাহীন ভাইয়ের বাকী একটি মামলায় জামিন করে ওকে জেলখানা থেকে বের করে সোজা হাসপাতালে ভর্তি করি।
হাসপাতালে ভর্তি করার পরে ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষায় ওর ১৮ অভার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে । ভূট্টো বলেন, তখন শাহীন ভাইয়ের পায়ে পচন ধরে গেছে । ডাক্তার জানায় ডায়াবেটিস না কমলে তার পায়ের অপারেশন করা যাবে না। এরপরে ভাইকে যশোর আহাদ হসপিটালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসায় দীর্ঘ তিন মাস যাবত প্রতিদিন ৫২ পয়েন্ট ইনসুলিন দেয়া লাগতো। এভাবে চিকিৎসা চলার পর ডায়াবেটিসের মাত্রা ৮ এর নিচে নেমে যাওয়ার পরে তাকে ঢাকায় পায়ের চিকিৎসা করা্তে নিয়ে যায় ।
ভূট্টো আরোও জানান, শ্যামলীতে আল-মারকাযুল হসপিটালে ভর্তি করার পরে প্রথমে একটা অপারেশন করা হলো সাকসেসফুল ভাবে । এর এক সপ্তাহ পরে করা হয় দ্বিতীয় অপারেশন। অপারেশন শেষে রাত তিনটা পর্যন্ত আমার সাথে কথা হয়েছে আমি তার পাশেই ছিলাম।কিন্তু এত কিছুর পরেও পারলাম না ভাইকে বাঁচাতে। রাতে কখন যে আমার ভাই মারা গেছে সেটা জানতেই পারিনি।
ভোর বেলায় ডাক্তার এসে আমাকে ডেকে বললো আপনার ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ, তাকে দ্রুত আইসিওতে নেন। ভাইকে নিয়ে গেলাম আইসিইউতে। আইসিইউ থেকে ফিরে এসে ডাক্তার বললেন উনি মারা গেছেন !
ভূট্টো বলেন, দুঃখ একটাই বিএনপির রাজনীতির কারণে আমি সহ আমার পরিবারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ বিএনপি’র কোন নেতা আমাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায়নি বরং আমরা না কি বিএনপির কেউ না!!