ইসরাইলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যে হাসপাতালে এসে মানুষ চিকিৎসা নেয়, সেই হাসপাতালই এখন আইসিইউতে। নির্বিচারে বোমা বর্ষণ, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ৭৫৬ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪৪ জনই শিশু। মহাসচিবের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘকে শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল।
ইসরাইলি বোমায় ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়ালেও এখনই যুদ্ধবিরতির পক্ষে নন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ইসরাইলি বোমা হামলায় গাজায় আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হলেও পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিমুখী আচরণের সমালোচনা করেছেন জর্ডানের রানি।
গাজার হাসপাতালই এখন আইসিইউতে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের দিকে। এখানে হাসপাতালগুলো আর কোনো কাজ করছে না। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, জনবল এবং জ্বালানি নেই। বোমা বর্ষণের কারণে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয় কিছুই নেই। তিনি ধ্বংসের মুখে থাকা স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জানান, এর আগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হাসপাতালের পরিস্থিতি জানালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেই এখন গাজাবাসীকে মৃত্যুর পথে যাত্রা করতে হবে। মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭০৪ জনই শিশু। একদিনেই নিহত হয়েছে ৭৫৬ জন যার মধ্যে ৩৪৪ জনই শিশু। ১৭ হাজার ৪৩৯ জন আহত হয়েছে। গণকবর এড়াতে পরিবারের সদস্যদের হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে দিচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। যাতে করে, ইসরাইলি হামলায় মারা যাওয়ার পর প্রিয়জনদের শনাক্ত করতে পারেন তারা।
জাতিসংঘের হিসাবে, গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত অনেকে গাজার হাসপাতালগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের ভিড়ে উপচে পড়ছে হাসপাতাল।
জাতিসংঘকে শিক্ষা দেবে ইসরাইল : হামাসকে নিয়ে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মন্তব্যকে ঘিরে জাতিসংঘকে একটা শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি দূত গিলাদ এরদান একটি আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন, মহাসচিবের মন্তব্যের জন্য আমরা জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করব। ইতিমধ্যে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিতসের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছি। তিনি বলেন, এখন সময় জাতিসংঘকে শিক্ষা দেওয়ার। এদিকে গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেছেন, নিরাপত্তার পরিষদে তার দেওয়া বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন।
এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, ১৮ দিন ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। সেই সঙ্গে পুরোপুরি অবরোধ করে রাখা হয়েছে এই ভূখণ্ড। এ পরিস্থিতির মধ্যে গাজার লাখো মানুষের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানিসংকট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, ‘যদি জরুরিভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ করা না হয়, তাহলে আমরা গাজায় আমাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হব।’ ইত্তেফাক থেকে নেয়া