বিডিটেলিগ্রাফ ডেস্ক।
চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়নের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে ৮ জন পরীক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ওএমআর অংশ পূরণ করছে—যা পরীক্ষা মূল্যায়নের নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বোর্ড সূত্র জানায়, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্তদের আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানান হয়, পরীক্ষক ছাড়া অন্য কেউ খাতা মূল্যায়ন করলে বা বৃত্ত ভরাট করালে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় শাস্তির বিধান রয়েছে।
এদিকে ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছে ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী—যা অতীতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করছে, তাদের উত্তরপত্র ভুলভাবে মূল্যায়িত হয়েছে, আর এর পেছনে দায়ী অদক্ষ ব্যক্তি বা টিকটকারদের মাধ্যমে খাতা কাটানোর প্রবণতা।
এই অভিযোগের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে শিক্ষার্থীরা ঢাকার বকশীবাজারে অবস্থিত শিক্ষা বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ করে। তাদের দাবি—অবিলম্বে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা নিজেরা খাতা কাটছে, কেউ খাতা হাতে লুচি-পরোটা খাচ্ছে, কেউ আবার ফলাফল নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দিচ্ছে। এসব ঘটনায় পরীক্ষার নিরপেক্ষতা ও বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা।
এদিকে, এবারের ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে। শুধুমাত্র ঢাকা বোর্ডেই আবেদন জমা পড়েছে ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে। সব মিলিয়ে খাতা চ্যালেঞ্জ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে গণিত বিষয়ে—৪২ হাজার ৯৩৬টি।
বোর্ড জানিয়েছে, ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হবে। সংশোধিত ফল শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং বোর্ডের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এস এম কামাল উদ্দিন হায়দারের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার উত্তরপত্র একটি গোপনীয় দলিল এবং একে পরীক্ষকের জন্য একটি ‘পবিত্র আমানত’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে কোনো গাফিলতিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এই ঘটনাগুলোর কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বোর্ডের দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।