এ,এইচ,এম,আজিজুল ইসলাম।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় মোড় পরিবর্তনের দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ নামে পরিচিত, যা এক দীর্ঘ সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, ভোট কারচুপি ও দমন-পীড়নের অবসান ঘটায়।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার নানা অভিযোগের মুখে পড়ে—যার মধ্যে অন্যতম ছিল নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। জনআন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
অবশেষে ৫ আগস্ট, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন। এর ফলে ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয় এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই পরিবর্তনকে অনেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সূচনা হিসেবে দেখেন।
রাজনৈতিক প্রভাব
১। গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা বৃদ্ধি
জনগণের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আশাবাদ তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হয়। ২। দলীয় রাজনীতিতে পুনর্বিন্যাস -আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতি দেশের রাজনীতিতে নতুন জোট গঠনের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারের জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠে। ৩। আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জ– ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকায় সহিংসতা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
অর্থনৈতিক প্রভাব
স্বল্পমেয়াদি প্রভাব
ক। লেনদেন ব্যাহত: সরকারি ছুটি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। খ। বিনিয়োগকারীর দ্বিধা: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন। গ। রপ্তানি-বাণিজ্যে বিলম্ব: বন্দর ও পরিবহন খাতে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে।
দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা
১। নতুন বিনিয়োগের সুযোগ: স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়তে পারে। ২।ব্যবসায়িক আস্থা পুনরুদ্ধার: সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ৩। বেকারত্ব হ্রাসের সুযোগ: দীর্ঘমেয়াদে শিল্প খাত ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হতে পারে।
জনমতের প্রতিক্রিয়া
বেশিরভাগ নাগরিক এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব সঠিক পথে না চলে, তবে আবারও স্বৈরশাসন বা রাজনৈতিক অচলাবস্থার দিকে দেশ ধাবিত হতে পারে।
উপসংহার
৫ আগস্ট শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভবিষ্যতেরও একটি নির্ধারক মুহূর্ত। এই পরিবর্তন যে সুযোগ তৈরি করেছে, তা কাজে লাগাতে হলে রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সমাজ ও নাগরিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্থিতিশীলতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ নতুন এক উন্নয়নযাত্রার পথে এগিয়ে যেতে পারবে।