বাঘারপাড়া প্রতিনিধি।।
মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতে পদক দেয়ার কথা বলে যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার নামে অনৈতিক কাজে নিয়োজিত হয়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থা।
সংস্থাটি এইমর্মে চিঠি দিয়েছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নবনির্বাচিত নয়জন ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যে আট জন কে। ইতোমধ্যে তাদের এই প্রপাগান্ডার কবলে পড়েছেন কেউ কেউ। এটা নিয়ে বাঘারপাড়ায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থা, মুক্তি ভবন (৩য় তলা), সেগুন বাগিচা, ঢাকার নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে, সততার উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাছাই পর্বে আপনাকে যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসাবে ‘মহান স্বাধীনতা পদক ও বিজয় পদক ২০২২’ এ ভূষিত করা হয়েছে।
চিঠির সাথে যে ফরমটি দেওয়া হয়েছে তা আগামী ৩০/০৪/২২ তারিখের মধ্যে মধ্যে পূরণ করে সংস্থার দপ্তরে পাঠাতে হবে। আর পদক বিতরণের দিন প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। অন্যান্যের মধ্যে থাকবেন, সাবেক মন্ত্রী আমির হোমেন আমু, এমপি মমতাজ বেগম, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল প্রমুখ।
বিষয়টি জানতে ওই সংস্থার চিঠি পাওয়া বাঘারপাড়া উপজেলার কয়েকজন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সাথে। তারা সবাই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন,তবে সবাই এব্যাপারে আগ্রহ দেখান নি। বন্দবিলা ইউপি চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান জানিয়েছেন, আমিও বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠি পেয়েছি। এর আগেও এরকম বিভিন্ন সংস্থার চিঠি পেয়েছি।
দরাজহাট ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানিয়েছেন, তিনিও একই চিঠি পেয়েছেন। পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে বলেই বিষয়টি আর কাউকেই বলিনি।
বার বার নির্বাচিত রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর রশিদ স্বপন জানান, আমিও পেয়েছি। জীবনে বহুবার পেয়েছি। একটাতেও যাইনি। ও সব ধান্দাবাজ। জহুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু জানান,তিনি ও চিঠি পেয়েছেন তবে এবিষয়ে কোনো কিছু করেন নি।
জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তিব্বত জানিয়েছেন, তিনিও একটি চিঠি পেয়েছেন। তার চিঠিতেও একই কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থা থেকে চিঠি পেয়ে তিনি তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন। এ পর্যন্তই তিনি সীমাবদ্ধ থেকেছেন। এর আগেও তিনি একটি সংস্থা থেকে চিঠি পেয়েছিলেন। সে সংস্থাটিও তাকে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যানের খেতাব দিতে চেয়েছিলো। এক সময় রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যে কারণে তিনি আর ওই খেতাব নেননি।
নারিকেল বাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান বাব্লু সাহা সংস্থার চিঠি পেয়েছেন। তার এ বিষয়টি বেশ প্রচার পেয়েছে।
একমাত্র চিঠি না পাওয়া দোহাকুলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার জানান, তিনি বাদে বাকি আট চেয়ারম্যানই বাংলাদেশ পল্লী চেয়ারম্যান উন্নয়ন সংস্থার চিঠি পেয়েছেন। এসব সংস্থা হচ্ছে ধান্দাবাজ।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর সাথে মোবইলে (০১৯৪২৭৮৫৬৫০) যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তারা ডিজিএফআই ও এনএসআই এর মাধ্যমে চেয়ারম্যানদের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশে হাজার হাজার চেয়ারম্যান রয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে আমরা মাত্র একশ চেয়ারম্যানকে শ্রেষ্ঠত্বের পদক দিচ্ছি।যদিও এক উপজেলায় নয়জন চেয়ারম্যানের মধ্যে আট জন চেয়ারম্যান কিভাবে শ্রেষ্ঠ হয় এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।